শ্রীলঙ্কাকে বিশাল ব্যবধানে হারের লজ্জা দিল ভারত
বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। প্রথম বলে উইকেট পড়া স্বাভাবিক ঘটনা। এরপর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যা হলো, তা লজ্জাজনক। ২৯ রানে অষ্টম উইকেট পতনের পর ম্যাচ জয়ের আশা তো ছেড়ে দিতে হয় লঙ্কানদের। আর লড়াইটা হয়ে ওঠে জোড়া লজ্জার হাত থেকে নিজেদের বাঁচানোর। কারণ, এর আগেই ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রানের ব্যবধানে হারের লজ্জা ছিল তাদের, আর ৩৫ রানের আগেই অলআউট হলে ভেঙে যেত জিম্বাবুয়ের রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত দুটির হাত থেকেই বেঁচেছে লঙ্কানরা। তবে, ভারতের কাছে হেরেছে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করে ৫০ ওভারে আট উইকেট হারিয়ে ৩৫৭ রান করে ভারত। জবাব দিতে নেমে ১৯.৪ ওভারে মাত্র ৫৫ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা।
৩৫৮ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য ছুঁতে গিয়ে জসপ্রীত বুমরাহর করা প্রথম বলে লেগ বিফোর হন লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে আরেক ওপেনার দিমুথ করুনারত্নেকে ফেরান মোহাম্মদ সিরাজ। একই ওভারে সাদিরা সামারাবিক্রমাকে ফিরিয়ে দেন মিরাজ। শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে তখন দুই রান, সাজঘরে তিন ব্যাটার। দলের রান যখন ২৯, তখন নেই আট উইকেট।
ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে কম ৩৫ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জাটা জিম্বাবুয়ের। আর সবচেয়ে বেশি ৩১৭ রানের ব্যবধানে হারের লজ্জাও শ্রীলঙ্কারই। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভারতের কাছেই এই ব্যবধানে হেরেছিল তারা। সেটি ছাপিয়ে আরও বড় লজ্জার চোখরাঙানি উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ৫৫ রান করতে পারে শ্রীলঙ্কা। ১১ জনের মধ্যে কেবল তিনজন পার করতে পেরেছেন দুই অঙ্ক। পাঁচজন খুলতে পারেননি রানের খাতা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪ রান করেছেন দশম ব্যাটার হিসেবে নামা কাসুন রাজিথা। ১২ রান করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও মাহিশ থিকসানা।
মুম্বাইয়ের পিচে যেন আগুন ঝরিয়েছেন ভারতের পেসাররা। ১০ উইকেটের নয়টিই নেন তারা। ১৮ রানের বিনিময়ে শামি বধ করেন পাঁচ লঙ্কান ব্যাটারকে। ১৬ রান দিয়ে সিরাজের শিকার তিনটি। একটি করে উইকেট নেন বুমরাহ ও রবীন্দ্র জাদেজা। ভারত পায় ৩০২ রানের অভাবনীয় এক জয়। রানের ব্যবধোনে যেটি বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ওয়ানডে ইতিহাসে চতুর্থ।
দিনের শুরুতে টস জিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠান লঙ্কান অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস। ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অধিনায়ক রোহিতের উইকেট হারায় ভারত। চার মেরে ইনিংস শুরু করলেও দ্বিতীয় বলে দিলশান মাদুশাঙ্কার বলে বোল্ড হন রোহিত। তবে, দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে বিরাট কোহলি ও শুভমান গিল মিলে গড়েন ১৮৯ রানের জুটি। ৯২ বলে ৯২ রান করা গিলকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন মাদুশাঙ্কাই। গিলের পরপর আউট হন কোহলিও। ৯৪ বলে ৮৮ করা কোহলিও পরিণত হন মাদুশাঙ্কার শিকারে।
দুই সেট ব্যাটারকে হারিয়ে ভারতের রানের চাকা সাময়িক শ্লথ হলেও শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাটে ফের গতি ফিরে পায় ভারত। আউট হওয়ার আগে ৫৬ বলে তিনটি চার ও ছয়টি ছক্কায় ৮২ রানের অসাধারণ একটি ইনিংস খেলেন শ্রেয়াস। তাকেও নিজের শিকারে পরিণত করেন মাদুশাঙ্কা। শেষ দিকে রবীন্দ্র জাদেজার ২৪ বলে ৩৫ রানে ভর দিয়ে ভারত পায় ৩৫৭ রানের সংগ্রহ।
১০ ওভারে ৮০ রান দিলেও লঙ্কানদের পক্ষে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন মাদুশাঙ্কা। দুশমন্থ চামিরা পান এক উইকেট।
চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল ভারত। সাত ম্যাচ খেলে জিতেছে সবকটিতে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই দাপট দেখিয়ে ম্যাচগুলো জিতেছে তারা। অবস্থান করছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে। অন্যদিকে, সাত ম্যাচে মাত্র দুই জয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান সাতে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ভারত : ৫০ ওভারে ৩৫৭/৮। ( রোহিত ৪, গিল ৯২, কোহলি ৮৮, রাহুল ২১, শ্রেয়াস ৮২, সূর্যকুমার ১২, জাদেজা ৩৫, শামি ২, বুমরাহ ১*; মাদুশাঙ্কা ১০-০-৮০-৫, চামিরা ১০-২-৭১-১, রাজিথা ৯-০-৬০-০, ম্যাথুস ৩-০-১১-০, থিকসানা ১০-০-৬৭-০, হেমন্ত ৯-০-৬৫-০)
শ্রীলঙ্কা : ১৯.৪ ওভারে ৫৫/১০। (নিশাঙ্কা ০, করুনারত্নে ০, মেন্ডিস ১, সাদিরা ০, আসালাঙ্কা ১, ম্যাথুস ১২, হেমন্ত ০, চামিরা ০, থিকসানা ১২*, রাজিথা ১৪, মাদুশাঙ্কা ৫; বুমরাহ ৫-১-৮-১, সিরাজ ৭-২-১৬-৩, শামি ৫-১-১৮-৫, যাদব ২-০-৩-০, জাদেজা ০.৪-০-৪-১)
ফল : ভারত ৩০২ রানে জয়ী।