বাংলাদেশকে উড়িয়ে সিরিজ জিতল নিউজিল্যান্ড
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের একমাত্র জয়টা এসেছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর বেশ কয়েকবার নিউজিল্যান্ড সফরে গেলেও কখনও জয়ের মুখ দেখেনি বাংলাদেশ। এবারও সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে সফরকারীরা। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ব্যাটাররা লড়াকু পুঁজি গড়লেও বোলারদের হতাশাজনক পারফম্যান্সে সাত উইকেটে হেরে সিরিজ হাতছাড়া করল বাংলাদেশ।
আজ বুধবার (২০ ডিসেম্বর) নেলসনে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯.৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৬.২ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে জয় তুলে নেয় স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
বাংলাদেশের ছুঁড়ে দেওয়া ২৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু করে নিউজিল্যান্ড। দুই ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং মিলে ঝড়ো শুরু এনে দেন দলকে। দুজন মিলে ৭৬ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ৭৬ রানের মাথায় হাসান মাহমুদের বল ডিপ মিড উইকেট অঞ্চল দিয়ে তুলে মারতে গিয়ে রিশাদ হোসেনের হাতে ধরা পড়েন রাচিন। আউটের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৩৩ বলে ৪৫ রান।
রবীন্দ্রর বিদায়ের পরও চলে নিউজিল্যান্ডের ঝড়ো ব্যাটিং। উইকেট হারিয়েও তাদের রানরেট খুব একটা কমেনি। দুজনে মিলে গড়েন ১৩১ বলে ১২৮ রানের অনবদ্য জুটি। মূলত, এই জুটিতেই জয়ের ভিত গড়ে ফেলে স্বাগতিকরা। দলীয় ২০৪ রানের মাথায় ইয়াংকে ফেরান হাসান। ৯৪ বলে ৮৯ রান করেন ইয়াং। ইয়াংয়ের বিদায়ের পর অধিনায়ক টম লাথামকে নিয়ে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর আরও চড়াও হন নিকোলস। শেষ পর্যন্ত ৯৯ বলে ৯৫ রান করে ফেরেন নিকোলস। তিনি ফিরলে টম ব্লান্ডেল ও টম ল্যাথাম মিলে নিশ্চিত করেন স্বাগতিকদের জয়। ল্যাথাম করেন ৩৪ রান আর ব্লান্ডেল করেন ২৪ রান।
এর আগে, নেলসনে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ম্যাচে ভালো করলেও এই ম্যাচে ইনিংস বড় করতে পারেননি এনামুল হক বিজয়। নিউজিল্যান্ডের পেসারদের দারুণ সুইং বোলিংয়ে শুরুতে আত্মসমর্পণ করেন আলগা শটে। দলীয় ১১ রানের মাথায় অ্যাডাম মিলনের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন বিজয়। ১২ বল খেলে দুই রানের বেশি করতে পারেননি তিনি।
বিজয়ের বিদায়ের পর সৌম্য সরকার ও নাজমুল হোসেন শান্ত আত্মবিশ্বাসী ব্যাটিং করছিলেন। বাউন্ডারিতে রান পাচ্ছিলেন। কিন্তু হুট করেই পথ হারায় বাংলাদেশ। একটি নয়, বাংলাদেশ উইকেট হারায় দুটি। দলীয় ৩৬ রানের মাথায় ডাফির লেন্থ বলে ফ্লিক খেলতে চেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু বল খানিকটা বেশি লাফ দেওয়ায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন বাংলাদেশের অধিনায়ক। পুরোপুরি শট খেলতে পারেননি। বল তার ব্যাটের ছোঁয়া পেয়ে কভারে নিকোলসের হাতে জমা পড়ে। ৯ বল ছয় রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
এরপর পেসার উইল ও’রউকে দারুণ পুল শটে বাউন্ডারির খাতা খোলা লিটন পরের বলে কভারে ক্যাচ দেন। ১১ বলে ছয় রানে থেমে যায় লিটনের ইনিংস। দ্রুত দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে ছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে সৌম্য ও তাওহিদ হৃদয়ের ৩৬ রানের জুটি আশা দেখাচ্ছিল। কিন্তু রান আউটে ভাঙল তাদের জুটি। ১৬ বলে ১২ রান করে ড্রেসিংরুমে ফেরেন হৃদয়।
হৃদয়ের বিদায়ের পর দলের হাল ধরে মুশফিক-সৌম্য জুটি। এই জুটিতে আসে আরও ৯১ বলে ১০৮ রান। দলীয় ১৭৬ রানে ডাফির লেন্থ বল খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মুশফিক। ৫৭ বলে পাঁচ বাউন্ডারিতে ৪৫ রান করে মুশফিক ফেরেন সাজঘরে।
তারপর মিরাজকে সঙ্গে নিয়ে ১১৬ বলে ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজের তৃতীয় সেঞ্চুরি পান সৌম্য সরকার। প্রবল সমালোচনা এবং আজকের ম্যাচ পরিস্থিতি বিবেচনায় সৌম্যর সেঞ্চুরি অনন্য এক ইনিংস। শেষমেশ মিডল অর্ডার ব্যাটারদের নিয়ে বাকি কাজটা সারেন সৌম্য। সুযোগ ছিল লিটনকে টপকে ওডিআইতে বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় শীর্ষে পৌঁছানোর। তবে দলীয় ২৯০ রানে ১৫১ বলে ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলে আউট হন সৌম্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ : ৪৯.৫ ওভারে ২৯১/১০ (সৌম্য ১৬৯, বিজয় ২, শান্ত ৬, লিটন ৬, হৃদয় ১২, মুশফিক ৪৫, মিরাজ ১৯, তানজিম সাকিব ১৩, রিশাদ ৬, শরিফুল ১, হাসান ০; মিলনে ১০-০-৭৪-১, ডাফি ১০-০-৫১-৩, উইলিয়াম ৯.৫-০-৪৭-৩, জশ ৬-০-৩০-১, অশোক ১০-১-৬৩-১, রাচিন ৪-০-১৯-০)।
নিউজিল্যান্ড : ৪৬.২ ওভারে ২৯৬/৩ (ইয়ং ৮৯, রাচিন ৪৫, নিকোলস ৯৫, লাথাম ৩৪, ব্লান্ডেল ২৪; শরিফুল ৯-১-৪৯-১, হাসান ৭-০-৫৭-২, তানজিম সাকিব ৬-০-৫১-০, মিরাজ ১০-১-৪৫-০, রিশাদ ৯.২-০-৬২-০, শান্ত ৫-০-৩০-০)।
ফলাফল : নিউজিল্যান্ড সাত উইকেটে জয়ী।