সাব্বির রহমান—স্বপ্ন দেখিয়ে হারালেন হতাশায়
ক্রিস গেইল, ডি ভিলিয়ার্সদের কী পাওয়ার! জাতিগতভাবেই আমরা ওদের চেয়ে শারীরিকভাবে পিছিয়ে। খুব আক্ষেপ নিয়ে নিয়ে একবার কথাগুলো বলেছেন সাকিব আল হাসান।
কারণটা সবারই জানা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন পাওয়ার হিটারের স্বপ্নটা বহুদিনের। এই স্বপ্নে বাঙালি যখন বিভোর ছিল ঠিক তখনই এক পশলা স্বস্তির বৃষ্টি হয়ে ধরা দেন সাব্বির রহমান। প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে, বল সীমানা ছাড়িয়ে বাঙালির স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
ক্লাস সেভেনে পড়াকালীনই যার ক্রিকেটের প্রতি প্রেম জাগে। সে সময় রাজশাহী মডেল স্কুলের কাকলি মাঠের এক ম্যাচে ব্যাটিং করতে নেমে স্থানীয় কোচ রশিদের নজর কাড়েন। সাব্বিরের ব্যাটিং দেখে পরদিন ক্লাবে ডেকে নেন রশিদ। যাত্রাটা শুরু সেখান থেকেই। ব্যাট হাতে দ্যুতি ছড়িয়ে সাব্বির জায়গা করে নেন রাজশাহীর বিভাগীয় দলে। তবে ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে যায় ২০১০ এশিয়ান গেমসের ফাইনালে। সেদিন শেষ পাঁচ ওভারে যখন বাংলাদেশের দরকার ছিল ৪৪ রান, সাব্বির খেলেছিলেন ৩০ রানের ক্যামিও। তাতে নিশ্চিত হয়ে যায় দলের জয়। সাব্বিরও চলে আসেন আলোচনায়।
২০১৪ সালে চলে আসে স্বপ্নময় মুহূর্ত। জাতীয় দলের ক্যাপ পান সাব্বির। বাংলাদেশ দলে অভিষেক হওয়া সাব্বির তখনই একজন হিটারের স্বপ্ন পূরণের পথেই হাঁটছিলেন। চট্টগ্রামে ওয়ানডে অভিষেকেও ২৫ বলে ৪৪ রানের ছোট্ট ক্যামিওতে জানান দিয়েছিলেন একজন হার্ড হিটারের অভাব মেটাতেই তার আগমন। সময়ের পরিক্রমে বাংলাদেশ জাতীয় দলে জায়গাও পাকা করে নিলেন সাব্বির। দৃষ্টি নন্দন চার-ছক্কায় জায়গা করে নিলেন ভক্তদের মনেও। মাত্র পাঁচ ম্যাচের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি খেলে ফেলেছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপও। বলা চলে খুব অল্প দিনে রাজশাহীর এই তরুণ পেয়ে গেলেন তারকা খ্যাতি!
কিন্তু এই খ্যাতিই যে একদিন হারিয়ে ফেলবে তাকে কে জানতো? তারকা হওয়ার পর সাব্বির একের পর এক নেতিবাচক খবরে জড়িয়ে পড়েন। কখনো দর্শক পিটিয়ে আলোচনায় কখনো আবার নারী ইস্যুতে আলোচনায়। কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দর্শকদের সঙ্গে অসদাচরণ করে বারবার খবরের শিরোনাম হতে শুরু করেন রাজশাহীর এই তরুণ। এক পর্যায়ে শৃঙ্খলাভঙ্গ করে নিষিদ্ধ হন জাতীয় দল থেকে। জরিমানাও দিতে হয় তার। নেতিবাচক খবরে জড়িয়ে জড়িয়ে তার অবস্থান গিয়ে ঠেকে তলাতি। হার্ড হিটারের স্বপ্ন গুটিয়ে তিনি হয়ে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের ‘ব্যাড বয়’।
শুধু বিতর্কিত কাজ নয়। দিনের পর দিন তার পারফরম্যান্সও গিয়ে ঠেতে তলানিতে। ৬৬ ওয়ানডে খেলা সাব্বিরের স্ট্রাইক রেট গিয়ে দাঁড়ায় ৯১.২৩ এ। টি-টোয়েন্টিতেও কমে দাঁড়ায় ৪৮টি ম্যাচে ১১৯.২৯। সব মিলিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেন সাব্বির। তাকে ঘিয়ে দেখা স্বপ্ন রূপ নেয় ঘোর অমানিষায়। যে ঘোর কাটিয়ে আজও ফিরতে পারেননি সাব্বির!