বিশ্বকাপের আগে জিম্বাবুয়ের কাছে হারের লজ্জা বাংলাদেশের
প্রথম চার ম্যাচে উদ্ধার করেছিলেন বোলাররা। চারটিতেই ব্যাটারদের ব্যর্থতা বোলিং দিয়ে মাড়িয়েছেন মেহেদি-রিশাদরা। কিন্তু এবার আর পারলেন না ত্রাতা হতে। বাজে ব্যাটিংয়ের পর নড়বড়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ ডুবল লজ্জায়। জিম্বাবুয়ের কাছে সিরিজের শেষ টি-টোয়েন্টিতে হারল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপের আগে আট উইকেটের পরাজয়ে শেষ হলো প্রস্তুতির মহড়া।
এই হারে পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ৪-১ ব্যবধানে। জিম্বাবুয়েকে আজ রোববার (১২ মে) হারিয়ে হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ থাকলেও সেটা কাজে লাগাতে পারল না নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি ছিল বিশ্বকাপের আগে নিজেদের বাজিয়ে নেওয়ার শেষ সুযোগ। কিন্তু শেষটা যে এত মলিন হবে হয়ত সেটা আঁচ করতে পারেননি ভক্তরা। ব্যাটিংয়ে বরাবরের মতোই হতাশার চিত্র। দেড়শ পার করতেই উঠেছে নাভিশ্বাস। অন্যদিন বোলিং বিভাগ জ্বলে, আজ সেখানেও অন্ধকার। দেড়শ রান নিয়েও লড়াই জমাতে পারলেন না মুস্তাফিজরা। বরং ব্যাট হাতে বাংলাদেশকে বার্তা দিল জিম্বাবুয়ে। ১৫৭ রান তাড়ায় শুরুতেই উইকেট হারালেও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। দ্বিতীয় জুটি টানে ১১৩ রান পর্যন্ত। চার-ছক্কার ঝড়ে জিম্বাবুয়ের বেনেট শেখালেন ওপেনিং কাকে বলে। ৪৯ বলে ৭০ রান করে তিনি আউট হলে বাকি কাজ সারেন সিকান্দার রাজা। ক্যাম্পবেলকে নিয়ে দারুণ ব্যাটিংয়ে ১৮.৩ ওভারে দলকে জয়ের বন্দরে নিরাপদে নিয়ে যান অধিনায়ক। ম্যাচ জয়ের পথে ৭২ রানের ইনিংস উপহার দিলেন জিম্বাবুয়ে তারকা। আর বাংলাদেশ ডুবে হতাশায়।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৬ উইকেটে স্কোরবোর্ডে ১৫৭ রান তুলেছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৪ রানটা এসেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে।
এদিন টসে হেরে স্বাগতিকরা নামে ব্যাটিংয়ে। আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়। আগের ম্যাচে ওপেনিং জুটিতে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছেন তানজিদ তামিম ও সৌম্য সরকার। আজ দুজনেই ডুবলেন হতাশায়। দলীয় ৯ রানেই উইকেট উপহার দিয়ে বিদায় নেন দুই ওপেনার।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ব্লেসিং মুজারাবানি অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে শর্ট কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম। পরের ওভারে সৌম্যকে বিদায় করেন বেনেট। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে শন উইলিয়ামসের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৭ রানে বিদায় নেন সৌম্য।
চারে নেমে আজও ব্যর্থ তাওহিদ। ৬ বল খেলে শুধু বল অপচয় করে তিনিও ফিরলেন সাজঘরে। স্কোরবোর্ডে ১ রানের বেশি যোগ করতে পারলেন না। ১৫ রানে তিন উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধের আভাস দেয় মাহমুদউল্লাহ ও নাজমুল হোসেন শান্তর জুটি। ৮৪ রানে শান্তকে আউট করে এই জুটি ভেঙে জিম্বাবুয়েকে ফের লড়াইয়ে ফেরান মাসাকাদজা। ফেরার আগে ২৮বলে ৩৮ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
তবে, বাকিদের ব্যর্থতার দিনে বিপরীত ছিলেন মাহমুদউল্লাহ। চরম বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ান। এর মধ্যে ৩৬ বলে তুলে নেন ব্যক্তিগত হাফসেঞ্চুরি। আগের ম্যাচে ব্যাট হাতে জ্বলতে নামা পারা সাকিব আল হাসান আজও পারলেন না ইনিংস বড় করতে। লুক জঙ্গুয়ের ডেলিভারিতে দুর্দান্ত ক্যাচ দিয়ে ২১ রানে ফেরেন তিনি। ব্যাটারদের একে একে ব্যর্থতার দিনে শুধুমাত্র মাহমুদউল্লাহই লড়াই করেন। অভিজ্ঞ এই ব্যাটারেই পথ দেখে বাংলাদেশ। ৪৪ বলে ৫৪ রান করে থামেন তিনি। তার বিদায়ের পর শেষ দিকে সাইফউদ্দিন ও জাকের আলির ব্যাটে ১৫৭ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। জাকের করেন ২৪ রান। আর সাইফউদ্দিনের ব্যাট থেকে আসে ৬ রান।
জিম্বাবুয়ের হয়ে বল হাতে ২০ রান দিয়ে দুটি উইকেট নেন বেনেট। ২২ রান খরচায় ব্লেসিং মুজারবানির শিকার দুটি। মাসাকাদজাও নিয়েছেন এক উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ : ২০ ওভারে ১৫৭/৬(তামিম ১, সৌম্য ৭, শান্ত ৩৬, তাওহিদ ১, সাকিব ২১, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, জাকের ২৪, সাইফউদ্দিন ৬; রাজা ৪-০-২৬-০, উইলিয়ামস ১-০-১২-০, জঙ্গুয়ে ৪-০-৩৩-১, মাসাকাদজা ২-০-২৩-১, মুজারবানি ৪-১-২২-২, বেনেট ৩-১-২০-২, ফারাজ ২-০-২০-০)।
জিম্বাবুয়ে : ১৮.৩ ওভারে ১৫৭/২ ( বেনেট ৭০, মারুমানি ১, রাজা ৭২, ক্যাম্পবেল ৮ ; সাকিব ৪-০-৯-১, সাইফ ৪-০-৫৫-১, মুস্তাফিজ ৩-০-১৮-০, রিশাদ ৪-০-৩৩-০, সৌম্য ১-০-১০-০)।
ফল : ৮ উইকেটে জিম্বাবুয়ের জয়।