সাক্ষাৎকার : দুই খুশিতে তানভীরের বাড়িতে মিষ্টির জোয়ার
ঘরোয়া ক্রিকেটে পরিচিত নাম তানভীর ইসলাম। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) মাতাচ্ছিলেন অনেক দিন ধরে। ২৭ বছর বয়সী এই বাঁহাতি স্পিনারকে এলাকায় সবাই চেনেন—বিপিএল তানভীর নামে। সেই পরিচয়টা আজ বদলে গেল চোখের পলকে। বিপিএল তানভীর বন্ধুদের কাছে হয়ে উঠলেন—বিশ্বকাপ তানভীর!
এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, নিজের জীবনের স্মরণীর দিনটার কথা এমন আনন্দের ছলেই শেয়ার করলেন তানভীর। যিনি ডাক পেয়েছেন আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলে। বিশ্বমঞ্চে মাতানোর সুযোগ পাওয়ার খবরটাও বন্ধুদের থেকেই পেয়েছেন তানভীর। একদিকে বোনের বিয়ে, অন্যদিকে ভাইয়ের বিশ্বকাপ যাত্রা। দুই খুশির খবরের তানভীরের বাড়ি বরিশালে রীতিমতো বইছে মিষ্টির জোয়ার।
তানভীর আপনাকে অভিনন্দন! বিশ্বকাপ দলে প্রথমবার সুযোগ পেলেন কতটা রোমাঞ্চিত?
তানভীর : আপনাকে ধন্যবাদ। সত্যিই জীবনের স্মরণীয় একটি দিন। আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাগছে। আমি ও আমার পরিবার খুব খুশি। এটা আসলে এক অন্যরকম অনুভূতি যেটা বলে বুঝানো সম্ভব নয়।
ডাক পাওয়ার খবর প্রথম কার কাছে শুনেছেন?
তানভীর : যখন বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করা হয় তখনই জানলাম। এর আগে আঁচ করতে পারেনি। একটা সম্ভবনা ছিল তবে শিউর তো আর ছিলাম না। আমি তো বরিশালে, সেখানেই আমার বন্ধুরা অনলাইনে লাইভ দেখতেছিল। তারাই জানতে পেরে প্রথম ফোন দিয়ে জানাল। এরপর গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
বাড়ির পরিবেশ কেমন? মা-বাবা কিছু বলেছেন কী?
তানভীর : বাড়িতে আসলে সবাই অনেক খুশি। আম্মু তো অনেক খুশি। আব্বুও খুশি। বাসার যা অবস্থা আনন্দের জোয়ার। বাড়িতে এখন দুইটা খুশির খবর। কারণ, আমার ছোট বোনের বিয়ে গেছে। এখন আবার আমার এই খবর এলো। দুই খুশির খবরে বাড়ি গমগম করছে। মিষ্টির জোয়ার চলছে, ঘরভর্তি মানুষ সবাই দুই খুশি বেশ উচ্ছ্বাসিত। এরই মধ্যে অনেক মিষ্টির অর্ডার করা হয়েছে। একদিকে আমি অর্ডার করেছি, আরেক দিকে বাবাও অর্ডার করেছেন। সবমিলিয়ে বাড়িতে মিষ্টির জোয়ার।
এলাকার মানুষের ভালোবাসা পাচ্ছেন কেমন?
তানভীর : আসলে এলাকায় আমাকে এতদিন সবাই বিপিএল তানভীর নামে জানতো। কারণ আমি তো, প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে বিপিএল খেলে যাচ্ছি। সেখান থেকেই এই পরিচিত হয়েছি। কিন্তু আজকে নতুন করে কিছু নাম শুনেছি। বিকাল থেকে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকছে সবাই। বিপিএল তানভীর থেকে জাতীয় দলের তানভীর, বিশ্বকাপের তানভীর।
জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমটা নতুন আপনার জন্য। কেমন উপভোগ করছেন?
তানভীর : ড্রেসিংরুমে আগে যারা ছিল তখন কেমন ছিল তা তো জানি না তবে এখন খুব ভালো লাগে। আমি যাওয়ার পর যে ড্রেসিংরুম পেয়েছি সেটা অনেক দারুণ। আলহামদুলিল্লাহ, অনেক ভালো ড্রেসিংরুম পেয়েছি আমি। তাসকিন ভাই, সাকিব ভাই, রিয়াদ ভাই আমার সাথে খুব মিশেন। আমি তো এখন নতুন তাই না, তবুও আমার সাথে অনেক মিশেন। অনেক দুষ্টুমি করেন। এটা খুব ভালো লাগে। তারা জুনিয়রদের সাথে খুব মজা করেন। আমি যাতে কোনোভাবে একা ফিল না করি, ইজি হতে পারি তাই তারা অনেক মিশেছেন। এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগছে।
বিশ্বকাপ ইস্যুতে কোচ এবং অধিনায়কের সঙ্গে আলাদা কোনো আলাপ হয়েছে?
তানভীর : অধিনায়ক আমার সাথে কিছু কথা বলেছেন। সেটা ছিল জিম্বাবুয়ে সিরিজ নিয়ে। বিশ্বকাপ নিয়ে এখনো কোনো কথা হয়নি। আর আমি দলে থাকব কি থাকব না এটা তো জানতাম না। উনি হয়ত জানতেন। তখন তো বলেনি, কারণ আগে প্রশ্ন আউট করলে সমস্যা (হাসি)। এখন দল ঘোষণা হলো অনুশীলন হবে, কাজ হবে, জানব।
বাইরের দেশে বড় মঞ্চে খেলতে যাচ্ছেন, ভয় হচ্ছে কি?
তানভীর : আমার কাছে ওমন ফিল আসেনি এখনও। হয়ত অ্যানালাইসিস ও টিম মিটিংয়ের পর বুঝব। সবার অভিজ্ঞতা শুনলে বুঝব।
নিজের কোনো লক্ষ্য সেট করেছেন?
তানভীর : আমার ওমন কোনো লক্ষ্য নেই। এটা আগে অনেকের মুখে শুনেছি—সেরা উইকেট শিকারি হতে চান, ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ হতে চান। অনেক শুনেছি লাইফে এমন। আমার এমন কোনো লক্ষ্য নেই। আমি শুধু দলের পরিকল্পনা অনুসারে ম্যাচ খেলতে চাই এবং ম্যাচটা জিততে চাই। এরপর ম্যাচটা জেতার পর যখন আমাদের ড্রেসিংরুমে একটা মিটিং হয় তখন যেন সবাই বলেন যে—তানভীরের এই স্পেলটার কারণে আমরা ম্যাচটা জিতেছি। সেটা যে কোনো কিছু হতে পারে—যে ভালো বোলিং করছি, ভালো ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছি। কিংবা একটা ভালো ক্যাচ ধরছি এমন আরকি।
সবমিলিয়ে নিজের মধ্যে কোনো চ্যালেঞ্জ কাজ করছে কী?
তানভীর : আসলে এখনো সেভাবে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। কীভাবে কি করতে হবে সেটা নিয়েও বিশেষভাবে ভাবছি না। কারণ, আমি বিশ্বাস করি, আমাকে যে রোল দেওয়া হবে আমি সেটা করব। ম্যাচ খেলার আগে ভিডিও অ্যানালাইসিস থাকবে, কোচের নির্দেশনা থাকবে, অধিনায়কের পরামর্শ থাকবে সেসব মেনেই কাজ করার চেষ্টা করব।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে কোথায় দেখছেন?
উত্তর : আমার তো ছোটখাটো ক্যারিয়ার। আমি তো শুধু ডিপিএল- বিপিএলেই খেলেছি। বিপিএলই আমার জন্য এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বড় মঞ্চ। তো আমার এই ছোট অভিজ্ঞতা থেকে বলব, টি-টোয়েন্টিতে বড় ছোট কোনো টিম নেই। মাত্র ২০ ওভারের খেলা। যে কোনো সময়ে যে কিছু হতে পারে। ছোট দলও যে কোনো সময় ভালো করতে পারে। তাছাড়া এখন আমাদের ড্রেসিংরুমের যে আত্মবিশ্বাস আর যাদের নিয়েছে তাদের যেই আত্মবিশ্বাস তাতে ভালো কিছু হবে আশা করি। দলের সবাই কিন্তু আত্মবিশ্বাসী।
এ ছাড়া অনেকেই আমার কাছাকাছি বয়সের। এটা হওয়াতে আমার জন্য খুব ভালো হয়েছে। বিশ্বাস করেন অনেক সহজ হয়েছে। আমাদের এখানে সিনিয়রদের মধ্যে আছেন সাকিব ভাই ও রিয়াদ ভাই। উনারা আমাদের সাথে যেভাবে মিশতেছেন সেটা দারুণ বিষয়।
ক্রিকেটে আপনি আদর্শ মানেন কাকে?
তানভীর : আমার তো প্রিয় ক্রিকেটার হলেন সাকিব ভাই ও রবীন্দ্র জাদেজা। আগে থেকেই এটা। সাকিব ভাইয়ার সাথে তো মাঝেমাঝেই কথা হয়। উনি তো অনেক ব্যস্ত একজন মানুষ। ম্যাচের পর তিনি ওইভাবে সময় দিতে পারেন না। তবে যতটুকু সময় উনাকে পেয়েছি চেষ্টা করেছি শেখার। কিছু কিছু জিনিস উনার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করেছি। উনিও যা যা জিজ্ঞাসা করেছি উনি তার উত্তর দিয়েছেন। আমি চেষ্টা করছি তা গ্রহণ করার।
নিজের প্রিয় তারকার সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করতে কেমন লাগছে?
তানভীর : এটা নিয়ে একটা মজার গল্প বলি। আমি প্রথম যেদিন প্রথম সাকিব ভাইয়ের সাথে ড্রেসিংরুম শেয়ার করলাম সেদিন, শুরুতে আমি উনাদের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়েছিলাম। প্রায় পাঁচ মিনিট উনার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, যে এই মানুষটা এত কিছু কীভাবে করেন? সবকিছুতেই কীভাবে এত সাফল্য তার! আসলে উনি মুগগ্ধ হওয়ার মতোই মানুষ। ওইদিন উনি এসে বসার পর আমার তীব্রভাবে এই ফিলটা হচ্ছিল। উনি উনার মতো কথা বলছিল। আর আমি তাকিয়ে ছিলাম। কয়েক মিনিট পর স্বাভাবিক হলাম।
প্রিয় তারকার রানে না থাকাটা পোড়াচ্ছে কী?
তানভীর :সাকিব ভাই আমাদের সুপারস্টার। উনি যেদিন খেলবে সেদিন একাই অনেক কিছু করবেন। আর বড় ক্রিকেটাররা বড় মঞ্চে বড় ম্যাচে খেলেন। দেখবেন উনি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে অনেক ভালো করবেন।
ভক্তদের নিয়ে কিছু বলার আছে?
তানভীর :বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ভক্তরা অনেক ভালোবাসে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব আমাদের সেরাটা দেওয়ার। তাদেরকেও অনুরোধ করব, সবসময় যেমন সাপোর্ট দিয়েছেন এবারও সেভাবে দিয়েন। আশাকরি ভালো কিছু হবে।