হতাশায় ডুবলেন মিরাজ, দ. আফ্রিকার লক্ষ্য ১০৬
সতীর্থরা যখন ব্যাট হাতে ব্যর্থতায় ডুবেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ তখন খেলছিলেন রয়ে সয়ে। কিন্তু সেই মিরাজই সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে ছটফট করছিলেন। এই সুযোগটাই নিয়ে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদার করা শর্ট অফ লেংথে করা ডেলিভারিতে র্যাম্প শট খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেলেন এই অলরাউন্ডার। সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থেকে শেষ হয় মিরাজের ইনিংস। সেই সঙ্গে শেষ বাংলাদেশের ইনিংসও। ঢাকা টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১০৬ রানের বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি বাংলাদেশ।
ঢাকা টেস্টে নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩০৭ রানে অলআউট হয়েছে বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৯৭ রান করেছেন সেঞ্চুরিয়ান মেহেদী হাসান মিরাজ। ১০১ বলে তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১০টি চার ও এক ছক্কায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৮ রান এসেছে জাকের আলির ব্যাট থেকে।
এই টেস্টের শুরু থেকেই বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছিল ব্যাটিং বিভাগ। অবশ্য এই সিরিজের আগে ভারত সফরেও একই দৃশ্যায়ন দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে টপ অর্ডার। ক্রিকেটে টপ অর্ডার বলতে যে কিছু আছে সেটাই যেন ভুলতে বসেছেন ক্রিকেটাররা। প্রতি নিয়ত দায়িত্ব নিতে হয় মিডল অর্ডার বা লোয়ার অর্ডার ব্যাটারদের।
এই টেস্টেও ব্যতিক্রম নয়। প্রথম ইনিংসে ভরাডুবির পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের হাল ধরেন মেহেদী হাসান মিরাজ। যেখানে দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশকে চোখ রাঙাচ্ছিল পরাজয় সেখানে সেই শঙ্কা ছাপিয়ে গোটা দুদিন তার ব্যাটে পার করে দেয় বাংলাদেশ।
জাকেরকে নিয়ে মিরাজ টপকেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার রান। বাংলাদেশলেও এনে দিয়েছেন লিড। সম্ভাবনা জাগিয়েছেন নিজের সেঞ্চুরির। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) চতুর্থ দিনের লড়াইয়ে লিড বাড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে নামলেও নতুন বলে বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি বাংলাদেশ। সকাল শুরুর ২৫ মিনিটের মধ্যে বাকি তিন উইকেট হারিয়ে ইনিংসের ইতি টানে স্বাগতিকরা।
টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশকে সাত উইকেটে ২৮৩ রানের সংগ্রহ এনে দেন মিরাজ। ৮১ রানের লিড নিয়ে আজ দিন শুরু করে বাংলাদেশ। দিন শুরুতেই বাংলাদেশ হারায় নাঈমকে। নতুন বলে প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন কাগিসো রাবাদা। তার ইনসুইং ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরলেন নাঈম হাসান। ১৬ রানে শেষ হয় তার ইনিংস।
এরপর বাংলাদেশকে হতাশ করেন তাইজুল। উইকেটে এসে ৭ রানে প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দেন। মাল্ডারের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি খোঁচা মেরে স্লিপে ক্যাচ তাইজুল ইসলাম।
তাইজুল যখন সাজঘরে ফেরেন তখন উইকেটে থাকা মিরাজ সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে। তার শেষ সঙ্গী হিসেবে আসেন হাসান মাহমুদ। তিনি এসে চার রান নিয়ে স্ট্রাইক দেন মিরাজকে। মিরাজও সেঞ্চুরির জন্য ছটফট করছিলেন। এই ছটফটের মাঝেই করে বসলেন ভুল। রাবাদার বলে তিনিও খোঁচা মেরে বসলেন। তাতেই তার সেঞ্চুরি হাতছাড়া। বাংলাদেশও শেষ হলো ১০৫ রানে।
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার থেকে ১০১ রানে পিছিয়ে থেকে ঢাকা টেস্টের তৃতীয় দিন শুরু করে বাংলাদেশ। উইকেটে ছিল মুশফিক ও জয়ের আগের দিনের ৪২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। কিন্তু থিতু হয়েও শুরুটা যেভাবে করেন দুজন তা ছিল চরম হতাশার।
দিন শুরুর ১৩ মিনিটের মাথাতেই কাগিসো রাবাদার বলে উইকেট উপহার দেন দুজন। দিনের পঞ্চম ওভারের প্রথম বলে রাবাদাকে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন জয়। ৯২ বলে ৪০ রানে স্থায়ী হয় জয়ের ইনিংস। একই ওভারের তৃতীয় বলে মুশফিকও ফাঁদে পড়েন। রাবাদার ফুল লেন্থ ডেলিভারি ভুল লাইনে খেলতে গিয়ে স্টাম্প হন মুশফিক। ৩৯ বলে ৩৩ রানে থামে তার ইনিংস।
এরপর উইকেটে এসে টিকলেন না লিটন দাসও। কেশভ মাহারাজের ধীর গতির বল ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন লিটন। কিন্তু বল টার্ন করে চলে যায় কিপার কাইল ভেরেনার হাতে। প্রথমে আউট দেননি আম্পায়ার। পরে রিভিউ নিয়ে লিটনের আউট নিশ্চিত করে প্রোটিয়ারা।
দ্রুত তিন উইকেট হারানোর পর কাল দিনের প্রথম সেশনেই ইনিংস পরাজয় দেখতে পারতো বাংলাদেশ। জাকেরকে নিয়ে সেই শঙ্কা দূর করেন মিরাজ। প্রথম সেশনেই দক্ষিণ আফ্রিকার লিড টপকানোর কাছাকাছি চলে যান তিনি। এগিয়ে যাওয়ার পথে ৯৪ রানে তুলে নেন ক্যারিয়ারের নবম টেস্ট হাফসেঞ্চুরি। এরপর লাঞ্চ থেকে ফিরে টপকে যান দক্ষিণ আফ্রিকার রান। দুজন মিলে বাংলাদেশকে নিয়ে যান লিডের পথে।
এর মাঝে বৃষ্টি নামলে এক ঘণ্টা ২০ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। বৃষ্টির বাধা কাটিয়ে খেলা গড়ানোর ১৬ মিনিটের মাথায় আলোর স্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় খেলা। দুই দফায় বন্ধ হওয়ার পর শেষ তৃতীয় দিন বিকেল ৪টায় ইতি টানতে বাধ্য হন আম্পায়াররা।
এই টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৩০৮ রানে থেমেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তার আগে টস জিতে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশকে মাত্র ১০৬ রানে অলআউট করে দক্ষিণ আফ্রিকা।