যে ভিডিও দিয়ে ইউটিউবের যাত্রা শুরু হয়েছিল
অন্য অনেক জিনিসের মতো আমাদের জীবনের অপরিহার্য একটি অংশে পরিণত হয়েছে ভিডিও আদান-প্রদান করার ওয়েবসাইট ইউটিউব। এ ইউটিউব একজনকে রাতারাতি বিখ্যাত কিংবা কুখ্যাত বানিয়ে দিতে পারে। অনেকে আবার নিজের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন ইউটিউবকে। তবে, শুরুটা কেমন ছিল জনপ্রিয় এ ওয়েবসাইটটির—চলুন জেনে নেই।
আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে (২৩ এপ্রিল ২০০৫) ইউটিউবে প্রথম ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন প্ল্যাটফর্মটির সহপ্রতিষ্ঠাতা জাভেদ করিম। ১৮ সেকেন্ডের ওই ভিডিওর শিরোনাম ছিল—‘মি অ্যাট দ্য জু’ (Me at the zoo)।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ডিয়েগোর একটি চিড়িয়াখানায় হাতির পালের সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন জাভেদ। ২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ইউটিউব। ২০০৫ সালের এপ্রিলে ইউটিউবে ওই ভিডিও আপলোড করেন তিনি।
এদিকে, ইউটিউবে আপলোড করা প্রথম ভিডিওটি দীর্ঘ ১৭ বছর পর ইউটিউবের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে শেয়ার করা হয়েছে। ভিডিওটির ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, ‘আপনি যদি এটি সম্পর্কে চিন্তা করেন, তবে এটি একটি ছোট #YouTubeFactsFest দিয়ে শুরু হয়েছিল।’
এদিকে, ওয়েবসাইটটির জন্য বানানো প্রথম ভিডিওটি দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছেন অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী।
সংক্ষেপে ইউটিউব প্রতিষ্ঠার ইতিহাস
ইউটিউব তৈরি করার আইডিয়াটা প্রথম আসে জার্মানিতে জন্ম নেওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বাবার সন্তান জাভেদের মাথায়। তিনি একটি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ২০০৪ সালে একজন অভিনেত্রীর একটি ভিডিও ক্লিপ অনেক খুঁজেও অনলাইনে পাননি তিনি। তখন চিন্তা করেন একটি ওয়েবসাইটের, যেখানে সবাই ভিডিও শেয়ার করতে পারবে, কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই। অর্থাৎ এক জায়গা থেকে যেকোনো ভিডিও শেয়ার করে মুহূর্তেই তা পৌঁছে দেওয়া যাবে বিশ্বের প্রতিটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে।
কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ার পাশাপাশি ২০০৪ সালে পেপ্যালে চাকরি করার সময় স্টিভ চ্যান ও চাদ হার্লির সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন জাভেদ। স্টিভ ছিলেন একজন কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র। হার্লি মূলত পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাইন বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিন জনই নতুন কিছু করতে চাইতেন। এমনকিছু করতে চাইতেন, যাতে পুরো পৃথিবী অবাক হয়ে যায়। কিন্তু, হঠাৎ করে তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ কম হওয়ায় সে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে একটু বেশি সময় লেগে যায়।
এরপর কিছু সময় বিরতির পর আবার তিন বন্ধু একত্রিত হন তাঁদের স্বপ্নের প্রকল্পটি বাস্তবে রূপ দিতে৷ আলোচনার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হলো সান ফ্রান্সিস্কোতে স্টিভ চেনের বাসায়। রাতের খাবারের সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো তাঁরা ইউটিউব নামক ভিডিও শেয়ারিং সাইট তৈরি করবেন। কারণ তখন ভিডিও শেয়ারিং-এর কোনো উল্লেখযোগ্য সাইট ছিল না।
পরিকল্পনা হলো, অসামান্য প্রতিভাবান দুজন বন্ধুও আছে, কিন্তু এ রকম একটা সাইট চালাতে অনেক টাকা দরকার, সেজন্য প্রয়োজন এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান, যিনি অর্থ বিনিয়োগ করবেন। ‘সেকুয়া ক্যাপিটাল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ১১.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করল। ব্যস! তাঁরা শুরু করে দিলেন কাজ।
২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তাঁরা youtube.com ডোমেইনটি নিবন্ধন করলেন। তিন প্রকৌশলী কয়েক মাসের মধ্যে এর কাজও শেষ করে ফেললেন। আর, নভেম্বরে ‘ব্রডকাস্ট ইওরসেলফ’ স্লোগানে অফিশিয়ালি উন্মুক্ত করা হয় ইউটিউব সাইটটি।