চীনের সঙ্গে ২৫ বছরের কৌশলগত চুক্তি নিয়ে ‘ইরানিদের উদ্বেগ’
বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) অংশ হিসেবে সম্প্রতি চীনের সঙ্গে ইরানের ২৫ বছর মেয়াদি কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি হয়েছে। ওই চুক্তির বিভিন্ন ধারা নিয়ে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ হারানো এবং ইরানে চীনের সামরিক ঘাঁটি তৈরির মতো আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ইরানিদের অনেকের মনে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআইর খবরে এমনটি বলা হয়েছে।
এএনআই জানায়, চুক্তির শর্তাবলীসহ পুরোটা ইরানি জনসাধারণের জন্য প্রকাশ করা হয়নি।
অনেকে মনে করছেন, এই চুক্তির ফলে ইরান চীনের কাছে কিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ বিকিয়ে দেবে এবং চীন ইরানে সামরিক ঘাঁটি গড়ে তুলবে। তুরস্কের সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির বরাত দিয়ে পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউনের খবরে এ কথা বলা হয়।
ইরানি নাগরিক সামিরে গুদারজি এক্সপ্রেস ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চুক্তির শর্তাবলীসহ কোনো তথ্য আমার জানা নেই। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক ইরানির এই বিষয়ের তথ্যাদি জানার অধিকার আছে। কেন একজন চীনা ব্যক্তি এখানে আসতে চায় এবং আমাদের দেশের মাটিতে থাকতে চায়।’
ইরান সরকারও কেনই বা জনগণের কথা না শুনে চীনাদের কথা শুনছে, প্রশ্ন রাখেন ইরানি নারী সামিরে।
চীনের সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্কের ব্যাপারে অপর একজন ইরানি তরুণের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সাফ ‘না’ বলে দেন। ইরানি তরুণ বলেন, ‘কম্বোডিয়ার সঙ্গে চীনের চুক্তির দিকে যদি আমরা লক্ষ্য করি, সেখানে তেমন ভালো কিছু হয়নি।’
ইরানের বিচার বিভাগের কর্মচারী মুহসিন ইবরাহিমি বলেন, চুক্তির সব শর্ত উম্মুক্ত করা উচিত। বিশ্ববাসীর এসব জানা উচিত।
চীন ও ইরানের মধ্যে ৪০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি হয়েছে বলে জানিয়েছে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। ইরানের তেল ও গ্যাসসহ নানা খাতে চীন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং তেহরান এই ২৫ বছরে বেইজিংকে বিশেষ মূল্যে জ্বালানি সরবরাহ করে যাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
গত ২৭ মার্চ ইরান সফরকারী চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ি ইরানের সঙ্গে ২৫ বছর মেয়াদি চুক্তি করেন। ইরানের পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ ওই চুক্তিতে সই করেন।
ধারণা করা হচ্ছে যে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের তেল কিনবে চীন। পাশাপাশি ইরানে কিছু বিনিয়োগও করবে চীন। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে বিদেশী বিনিয়োগ অনেকটা বন্ধই রয়েছে।
গত বছর এই সহযোগিতা চুক্তির খসড়া ফাঁস হওয়ার পর অনেক ইরানি নাগরিক চীনের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। বেল্ট এন্ড রোডসের চুক্তিগুলো সাধারণত চীনের স্বার্থই রক্ষা করে থাকে। এদের মধ্যে কিছু প্রাথমিকভাবে আকর্ষণীয় মনে হলেও শেষ পর্যন্ত ছোট ও গরীব দেশগুলোর জন্য সেগুলো গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যখন তারা দেখেছে যে চুক্তির উদ্দেশ্য থেকে ছিটকে পড়েছে তারা।
ইরান চীনের চেয়ে আকারে ছোট হলেও দেশটির বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রতিবাদী বৈদেশিক নীতির কারণে এর একটি স্বকীয়তা রয়েছে। নতুন চুক্তি ইরান ও আমেরিকার মধ্যে দ্বন্দ্বের রসদ যোগাবে।