তুরস্কের মসনদের পথে ৫০ শতাংশের কম ভোট নিয়ে এগিয়ে এরদোয়ান
তুরস্কের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে কে হতে চলেছেন বিজয়ী, ভোট গণনাজুড়েই তা অনেকটাই ছিল ধোঁয়াশায় মোড়া। প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিলেন ২০ বছর ধরে তুরস্কের ক্ষমতায় থাকা রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। একটি সময় পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভোটের কোটা পূরণ করেই এগোচ্ছিল তার ভাগ্যরেখা। শেষমেশ তা যেন চলতে শুরু করে উল্টো রথে। ভোটপ্রাপ্তির শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখলেও ৫০ শতাংশ ভোটের কোটা থেকে ছিটকে পড়েন তিনি।
দেশটির নিয়ম অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট পদে জিততে একজন প্রার্থীকে এই পদে পড়া মোট ভোটের অর্ধেকের বেশি পেতে হয়। বাংলাদেশ সময় আজ সোমবার (১৫ মে) ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ৯৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ ব্যালট বক্স খোলা হয়। এসময় ওই ৫০ শতাংশ ভোট পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারেননি এরদোয়ান। এদিকে, ব্যবধান কমতে থাকে কিলিকদারোগলুর সঙ্গে। ফলে এই পদে নির্বাচন দ্বিতীয় ধাপে (রান অফ) যাওয়ার শঙ্কা দেখা দেয়।
গতকাল রোববার বিকেলে শেষ হয় নির্বাচন। পরে শুরু হয় গণনা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তুরস্কের স্থানীয় গণমাধ্যম ডেইলি সাবাহ থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। গণমাধ্যমটি বলছে, আজকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট পড়েছে মোট ভোটারের ৮৮ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ, ভোট দিয়েছেন ছয় কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৬৫১ জন ভোটার। এর মধ্যে ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ বা দুই কোটি ৮৩ লাখ ১৭০ ভোট পেয়েছেন জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) এরদোয়ান। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) কেমাল কিলিকদারোগলু পেয়েছেন দুই কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯৯১ বা ৪৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ ভোট। আর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়া মুহেরেম পেয়েছেন দুই লাখ ৩১ হাজার ৭৫৪ ভোট বা শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশ। আরেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সিনান ওয়াগান পেয়েছেন পাঁচ দশমিক ২৮ শতাংশ বা ২৭ লাখ ৫২ হাজার ৬২২ ভোট।
এদিকে, পার্লামেন্ট নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছে ছয় কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৬৫১ বা ৮৫ দশমিক সাত শতাংশ ভোট। ইতোমধ্যে ৯৩ দশমিক ২১ শতাংশ ব্যালটের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। এতেও এগিয়ে আছে এরদোয়ানের একে পার্টির জোট। এরদোয়ানের পিপলস অ্যালায়েন্স জোট পেয়েছে ৩২৪টি আসন। আর কিলিকদারোগলুর ন্যাশনস অ্যালায়েন্স পেয়েছে ২১২টি আসন। আর অন্যান্য দল পেয়েছে ৬৪টি আসন।
এর আগে রোববার সকালে তুরস্কের আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দেশটির স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে ভোটগ্রহণ চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোটাররা এদিন একইসঙ্গে প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দিয়েছেন।
প্রেসিডেন্ট পদে যত ভোট পড়েছে তার ৫০ শতাংশ ভোট না পেলে দ্বিতীয় ধাপের জন্য অপেক্ষা করতে হবে শীর্ষ ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীকে। কারণ, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে এরদোগান রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হওয়ার এক মাস পরে তুরস্ক প্রধানমন্ত্রী শাসিত সংসদীয় রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে সরে আসে, চালু হয় প্রেসিডেন্ট শাসিত রাষ্ট্রব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় প্রতি পাঁচ বছর পর একই দিনে রাষ্ট্রপতি ও সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী হতে হলে এই পদে মোট প্রাপ্ত ভোটের অর্ধেকের বেশি ভোট প্রার্থীকে পেতে হবে। কেউ যদি এই পরিমাণ ভোট না পান, তাহলে, সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত দুই প্রার্থীকে দ্বিতীয় ধাপের (রানঅফ) জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আর সেটি অননুষ্ঠিত হয় দুই সপ্তাহ পরে।