পুতিনের সমাবেশে জোর করে লোকজন আনার অভিযোগ
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার দেশটির রাজধানী মস্কোয় সরকার-সমর্থিত এক সমাবেশে ভাষণ দেন। অভিযোগ উঠেছে—ওই সমাবেশে যোগ দিতে লোকজনকে বাধ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া সমাবেশে অংশ নিলে জনপ্রতি ৫০০ রুবল (রুশ মুদ্রা) দেওয়ার প্রচারণা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ।
সংবাদমাধ্যম দ্য মস্কো টাইমস এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলের অষ্টম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে শুক্রবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে ভাষণ দেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
এ সময় স্টেডিয়ামে প্রায় ৯৫ হাজার মানুষ উপস্থিত ছিল এবং আরও এক লাখ লোক স্টেডিয়ামের বাইরে ছিল বলে দাবি করেছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা আরআইএ নভোস্তি।
এদিন লুঝনিকি স্টেডিয়ামজুড়ে ছিল রাশিয়ার তেরঙা পতাকা। আর, স্টেডিয়ামের পর্দায় ভেসে উঠছিল ক্রিমিয়ায় রুশ সামরিক বিদ্রোহের ছবি। সেইসঙ্গে বাজছিল সামরিক বাহিনীর সাফল্য উদ্যাপন করা গান।
এদিকে এমন জাঁকজমকপূর্ণ সমাবেশের আগে আগে অভিযোগ ওঠে—স্টেডিয়ামে হাজির হওয়া অনেককেই সেখানে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। এ ছাড়া বার্ষিক এ উদ্যাপনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বেশি দেখাতে সরকারি চাকরিজীবীদের সেখানে হাজির করা হয় বলেও অভিযোগ।
স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমকে স্টেডিয়ামের বাইরে থাকা এক নারী বলেন, ‘তারা আমাদের বাসে উঠিয়ে এখানে নিয়ে এসেছে।’
এদিকে, অ্যাভতোজাক লাইভ নিউজ চ্যানেল টুইটারে প্রকাশিত একটি ছবির বরাতে জানিয়েছে, লুঝনিকি স্টেডিয়ামের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য লোকজনকে ৫০০ রুবল করে দেওয়া হবে বলে প্রচারণা চালানো হয়েছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্রকাশিত একাধিক ভিডিওতে অনুষ্ঠান শুরুর মিনিট বিশেকের মধ্যে বহু মানুষকে স্টেডিয়াম ছেড়ে যেতে দেখা যায়।
এর আগে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তল্লাশি করে লোকজনকে স্টেডিয়ামে ঢুকতে দেওয়া হয়। পুতিন প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেওয়ার পর থেকে রাশিয়ার অনেকে মানুষ এর বিরোধিতা করে আসছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে মস্কোতেও উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কারণে স্টেডিয়ামেও ছিল বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে ইউক্রেন বা পশ্চিমা সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতীক বহন করাও নিষিদ্ধ ছিল বলে জানিয়েছে বাজা টেলিগ্রাম চ্যানেল। তবে, এ তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি দ্য মস্কো টাইমস।
এদিকে, স্টেডিয়ামে আগতদের উৎসবের আমেজে দেখা গেলেও, সংবাদমাধ্যম সোটা দাবি করেছে—বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে স্টেডিয়ামের কাছে আটক করা হয়। তাঁদের সবাইকে পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সোটা জানিয়েছে।
রাশিয়ার ক্রিমিয়া অধিগ্রহণকে বেশির ভাগ দেশই স্বীকৃতি দেয়নি। এ ছাড়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে মস্কোর পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের বিরুদ্ধেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মারাত্মক নিন্দার ঝড় উঠেছে।
এদিকে, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দনবাসে কথিত ‘গণহত্যা’ বন্ধ করাই দেশটিতে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালানোর লক্ষ্য বলে দাবি করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শুক্রবার এক আবেগপূর্ণ ভাষণে পুতিন দাবি করেন, দনবাসের জনগণকে ‘গণহত্যা’ থেকে রক্ষা করাই ইউক্রেনে রুশ অভিযানের লক্ষ্য।
পুতিন তাঁর ভাষণে ইউক্রেনে চালানো ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের এমন জাতীয় ঐক্য ছিল না।