বিপদ জেনেও ভূমধ্যসাগর রুটে থামছে না ইতালির পথে যাত্রা
ভালো ভবিষ্যতের আশায় বৈধ বা অবৈধ উপায়ে প্রতিদিনিই ইউরোপের দেশগুলোতে পাড়ি জমাচ্ছে অভিবাসন প্রত্যাশীরা। অবৈধ উপায়ে যারা পাড়ি জমাচ্ছে, তাদের অন্যতম প্রধান রুট ভূমধ্যসাগর। এই রুটেই ইউরোপের দেশ ইতালিতে যাচ্ছে অভিবাসন প্রত্যাশীরা। এদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের ভাগ্যের সহায়তায় পৌঁছাচ্ছে লক্ষ্যে। তবে, জাহাজডুবিসহ নানা কারণে অনেকেই নিহত হচ্ছে সাগরে, কেউবা হচ্ছেন নিখোঁজ। এসব বিপদ জেনেও কমছে না এই রুটের ব্যবহার।
ভূমধ্যসাগর দিয়ে অভিবাসন প্রত্যাশীদের পছন্দের তালিকার শীর্ষে ইতালি। উত্তর আফ্রিকা ও তুরস্ক থেকে শরণার্থীরা দেশটিতে আসছে। তবে, সম্প্রতি সময়ে অভিবাসী নিয়ে বেশ কঠোর হতে যাচ্ছে ইতালি সরকার। তারপরও কমছে না শরণার্থীদের স্রোত। আজ রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এমনটি জানিয়েছে লন্ডন ভিত্তিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স।
ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, চলতি বছরের ১ তারিখে থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েকটি নৌযানে করে ইতালি উপকূলে এসেছে ১৩ হাজার ৬৭ অভিবাসন প্রত্যাশী। এর মধ্যে নাবালক ৮৬১ জন। গত বছরের একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ২৭৩ জন। তার আগের বছর, অর্থাৎ ২০২১ সালের একই সময়ে ইতালিতে পৌঁছায় চার হাজার ১৫৬ জন।
২০২২ সালে ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছে এক লাখ পাঁচ হাজার ১২৯ জন, যা তার আগের বছর ছিল ৬৭ হাজার ৪৭৭ জন। আর ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ১৫৪ জন।
ইতালিতে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছিল ২০১৬ সালে। ওই বছর রেকর্ড এক লাখ ৮১ হাজার ৪৩৬ শরণার্থী ইতালিতে পৌঁছেছিলেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) বলছে, ২০২২ সালে ইতালিতে যত অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছিল তার ৫১ শতাংশই লিবিয়া থেকে এসেছিল। তিউনিশিয়া ও তুরস্ক থেকে এসেছিল যথাক্রমে ৩১ এবং ১৫ শতাংশ।
চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২৩ সালের এ পর্যন্ত ইতালিতে যত অভিবাসন প্রত্যাশী এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি নাগরিক পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনিয়া থেকে এসেছে। দেশটি থেকে এসেছে এক হাজার ৬৫৪ শরণার্থী। এরপরেই রয়েছে আইভেরি কোস্ট। দেশটি থেকে এক হাজার ৫১১ অভিবাসন প্রত্যাশী ইতালিতে পাড়ি জমিয়েছেন। ৯৯৭ নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। তিউনিশিয়া থেকে ইতালিতে পৌঁছেছে ৮৪৬ অভিবাসন প্রত্যাশী। আর মিশর থেকে গেছে ৪৯০ জন।
তালিকায় ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির ৪৪৭ নাগরিক ভূমধ্যসাগর হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন ইতালিতে।
২০২২ সালে ইতালিতে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন প্রত্যাশী গিয়েছে মিশর থেকে। বছরটিতে ২০ হাজার ৫৪২ মিশরিয় নাগরিক পাড়ি জমিয়েছে ইতালিতে। ১৮ হাজার ১৪৮ তিউনিশিয় নাগরিক গিয়েছে ইউরোপের দেশটিতে। বছরটিতে ১৪ হাজার ৯৮২ বাংলাদেশি নাগরিক অবৈধ উপায়ে পাড়ি জমিয়েছে ইতালিতে। এরপরেই রয়েছে সিরিয়া ও আফগানিস্তান। দেশ দুটি থেকে যথাক্রমে গিয়েছে আট হাজার ৫৯৪ ও সাত হাজার ২৪১ শরণার্থী।
নিখোঁজ অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে একটি প্রজেক্ট রয়েছে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম)। ওই প্রজেক্টের তথ্য মতে, ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরের রুটটি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশকালে ২০ হাজার ৩৩৩ জন অভিবাসন প্রত্যাশী মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে।
অভিবাসন প্রত্যাশীদের রুখতে ২০১৭ সালে লিবিয়া সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করে ইতালি সরকার। ওই চুক্তির পর লিবিয়া উপকূল থেকে অভিবাসন প্রত্যাশেীদের যাওয়া কমে যায়। তবে, মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, লিবিয়ার বিভিন্ন ডিটেশন ক্যাম্প অভিবাসন প্রত্যাশীদের আটক করে নির্যাতন করা হচ্ছে।
কোভিড মহামারির সময় ইতালিতে অভিবাসন প্রত্যাশীর সংখ্যা কমলেও বর্তমানে তা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এমনকি, সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই সংখ্যাও বাড়ছে। তবে, অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে ইতালির মেলোনি সরকার।