‘যৌতুক চেয়ে নির্যাতন’, দুই সন্তানসহ ৩ বোনের আত্মহত্যা
যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের শিকার হয়ে দুই সন্তানসহ তিন বোন আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তিন বোনের একই পরিবারে বিয়ে হয়েছিল।
ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের রাজস্থান রাজ্যে। শনিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
মৃত তিন বোনের একজনের হোয়াটসঅ্যাপের স্টোরি অনুযায়ী ধারণা করা হচ্ছে—তাঁরা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন। নিহত তিন বোনের পরিবারের সদস্যেরা এ ঘটনায় তাঁদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—মৃত তিন বোনের নাম কালু মিনা (২৫), মমতা মিনা (২৩) ও কমলেশ মিনা (২০)। তাঁদের মধ্যে দুজন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। গতকাল শনিবার রাজস্থানের জয়পুর জেলার দুদু শহরের একটি কূপে ওই তিন বোন এবং ২৭ দিনের নবজাতকসহ দুই শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেছে।
এনডিটিভি বলছে, কালু মিনা, মমতা ও কমলেশের রাজস্থানের দুদু জয়পুর জেলার চাপিয়া গ্রামে একই পরিবারের তিন ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। মৃতদের পরিবারের অভিযোগ—শ্বশুরবাড়ির লোকজন যৌতুকের দাবিতে ওই তিন বোনকে নিয়মিত হয়রানি এমনকি মারধরও করত।
এনডিটিভির তথ্য অনুযায়ী, তিন বোন কোনো ‘সুইসাইড নোট’ রেখে যাননি। তবে, তাঁদের পরিবারের সদস্যেরা সবচেয়ে ছোট বোন কমলেশ একটি হোয়াটসঅ্যাপ স্টোরি শেয়ার করেছেন। যেখানে কমলেশ হিন্দিতে লিখেছেন, ‘আমরা এখন চলে যাচ্ছি। খুশি থাকুন। আমাদের মৃত্যুর কারণ আমাদের শ্বশুরবাড়ি। প্রতিদিন মরার চেয়ে একেবারে মরে যাওয়াই ভালো। তাই, আমরা একসঙ্গে মরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করি, আগামী জীবনে আমরা তিন জন একসঙ্গে থাকব। আমরা মরতে চাইনি। কিন্তু, আমাদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের হয়রানি করে। আমাদের মৃত্যুর জন্য আমাদের মা-বাবাকে দায়ী করবেন না।’
তিন বোনের চাচাতো ভাই হেমরাজ মিনা বলেছেন, ‘যৌতুকের জন্য আমার বোনদের নিয়মিত মারধর ও হয়রানি করা হতো। গত ২৫ মে তারা নিখোঁজ হলে, আমরা তাদের সন্ধানে এখানে-সেখানে ছোটাছুটি করি। আমরা স্থানীয় পুলিশ স্টেশনে, নারী হেল্পলাইনে ও জাতীয় কমিশনে এফআইআর নথিভুক্ত করি।’
তিন বোনের বাবা পুলিশের কাছে করা অভিযোগে বলেছেন, যৌতুকের জন্য তাঁর মেয়েরা তাদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে হেনস্থা হতো। মেয়েরা নিখোঁজ হলে প্রথমে থানায় একটি নিখোঁজ মামলা করা হয়। পরে, গত বৃহস্পতিবার এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়।
তিন বোনের পরিবারের সদস্যেরা তাঁদের খোঁজে শহরের বিভিন্ন স্থানে নিখোঁজ বিজ্ঞপ্তি লাগিয়েছিলেন।
জি নিউজ বলছে, গত বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল ওই পাঁচ জন। পরে শনিবার শ্বশুরবাড়ির কাছে একটি কুয়া থেকে তাদের মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনার পর তিন নারীর স্বামী ও তাঁদের মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, তিন নারীর সঙ্গে মৃত দুই শিশু হচ্ছে কালুর চার বছরের সন্তান হর্ষিত এবং ২৭ দিনের একটি শিশু। অন্যদিকে, মমতা ও কমলেশ সন্তানসম্ভবা ছিলেন।
মৃত তিন বোনের বাবার অভিযোগ—বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য তাঁর মেয়েদের অত্যাচার করা হতো। দুই সপ্তাহ আগে শ্বশুরবাড়ির মারধরে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় কালুকে। তাঁর চোখে গুরুতর আঘাত লাগে। কয়েক দিন আগেই তিনি হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফিরেছিলেন।
কালু স্নাতক শেষ বর্ষে পড়তেন; মমতা রাজ্য পুলিশের পরীক্ষায় পাস করেছিলেন। আর, কমলেশ ভর্তি হয়েছিলেন এক কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে।
স্থানীয় নাগরিক অধিকার সংগঠনগুলো এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে নিহতদের স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে।
রাজস্থানের পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল) এর সভাপতি কবিতা শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘ভয়ংকর এ ঘটনায় সাতটি প্রাণ ঝরে গেছে। কারণ, দুই নারী তাঁদের অনাগত সন্তানসহ মারা গেছেন।’
পিইউসিএলসহ অন্যান্য মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো দাবি করছে—মামলাটি যেন স্থানীয় পুলিশের কাছ থেকে সিআইডি-ক্রাইম ব্রাঞ্চের কাছে স্থানান্তর করা হয়।
কবিতা শ্রীবাস্তব বলেছেন, অভিযোগ পাওয়ার পরেও যে পুলিশ কর্মকর্তারা ওই তিন নারীর সন্ধান করেননি, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ছাড়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (খুন) বা ৩০৪-খ (যৌতুক এবং মৃত্যু) ধারা অনুযায়ী, এফআইআরে যুক্ত করা উচিত।