শাহবাজ শরিফের উত্থান ইতিহাস
পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ১৭৪ ভোট পেয়ে আজ সোমবার ২৩তম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন মিয়া মোহাম্মদ শাহবাজ শরিফ। এর আগে সর্ববৃহৎ দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির ১৫৫ সদস্য আজকের অধিবেশন বয়কট করে পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করেন।
পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন অনলাইন প্রতিবেদনে পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেতা শাহবাজ শরিফের উত্থানের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। এনটিভি অনলাইনের পাঠকদের জন্য এখানে অনুবাদ করে দেওয়া হলো-
রাজনীতিক শাহবাজ
শাহবাজ শরিফ পাকিস্তানের তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই। ১৯৫০ সালে জন্ম নেওয়া শাহবাজেরও রয়েছে দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তিন তিন বার গুরুত্বপূর্ণ পাঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।
সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ নওয়াজ শরিফ ও তাদের ভাইদের সৌদি আরবে বাধ্যতামূলক প্রবাসজীবনে পাঠায়। এর আগে শাহবাজ ১৯৯৭ থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। দেশে ফেরার পর ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এবং ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পিটিআই সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে পার্লামেন্টে বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন শাহবাজ। মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে নিজেকে প্রধান চাকর হিসেবে আখ্যায়িত করতেন তিনি।
১৯৮৮ সালে পাঞ্জাব থেকে প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলির এমপিএ নির্বাচিত হন শাহবাজ শরিফ। দুবছর পর ১৯৯০ সালের জাতীয় নির্বাচনে লড়ে এমএনএ হন। ১৯৯৩ সালে গিয়ে আবার প্রাদেশিকে ভোট করেন এবং এমপিএ নির্বাচিত হন। এবার পাঞ্জাবের প্রাদেশিক অ্যাসেম্বলিতে বিরোধীদলীয় নেতা হন। ১৯৯৬ সালে এই দায়িত্ব শেষ হয়।
১৯৯৭ সালের প্রাদেশিক ভোটে জিতে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শাহবাজ। ১৯৯৯ সালে পারভেজ মোশাররফের সেনা অভ্যুত্থানের আগ পর্যন্ত তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকেন।
প্রায় এক দশক বাধ্যতামূলক প্রবাসজীবন থেকে ফিরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জিতে শাহবাজ শরিফ দ্বিতীয়বারের মতো পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী হন।
অন্যদিকে, শাহবাজের ছেলে হামজা শাহবাজ শরিফ বর্তমানে পাঞ্জাব প্রদেশের এমপিএ নির্বাচিত রয়েছেন। আগামীতে প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য শক্ত প্রার্থী হামজা। পিটিআই সরকারের আমলে বাবার মতো হামজাও বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন।
২০১৮ সালে পাকিস্তানের নির্বাচনে কয়েকটি আসন থেকে লড়লেও জয় পান শুধু লাহোর আসন থেকে। একই সঙ্গে পাঞ্জাবের প্রাদেশিক নির্বাচনেও দুটি আসনে জয় পান তিনি। প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য পার্লামেন্টের নির্বাচনে ৯৬ ভোট পেয়ে ইমরান খানের কাছে হেরে যান শাহবাজ। অন্যদিকে, ১৭৬ ভোট পেয়ে প্রধানমন্ত্রী হন পিটিআই নেতা।
ব্যবসায়ী শাহবাজ
মিয়া মোহাম্মদ শরিফের দ্বিতীয় ছেলে রাজনীতির পাশাপাশি নিজেকে ব্যবসায় নিয়োজিত রেখেছেন। পাকিস্তানের অন্যতম ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইত্তেফাক গ্রুপ অব কোম্পানিজের সহ-সত্ত্বাত্তাধিকারী শাহবাজ। ১৯৮৫ সালে লাহোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতিও নির্বাচিত হন তিনি।
শক্তিমান ও দৃঢ়চিত্ত্বের ব্যক্তিত্বের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত শাহবাজ শরিফ। পাঞ্জাবের উন্নয়নে মেট্রো বাসসহ দৃশ্যমান বড় বড় কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
বড় ভাই নওয়াজ শরিফের প্রতি অবিরাম আনুগত্যের জন্যও পাকিস্তানের রাজনীতির শীর্ষমহলে আলোচিত নাম শাহবাজ। ২০১৮ সালের মার্চে পিএমএল-এন’র কাউন্সিলে দলটির সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর শাহবাজ শরীফ বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, নওয়াজ পাকিস্তানের একমাত্র রাজনীতিক যাকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র রাজনৈতিক উত্তরসূরী বলা যায়। নওয়াজ শরিফের মতো কায়েদ (নেতা) পেয়ে আমরা গর্বিত।”
এ ছাড়া সামরিক-বেসামরিক সমন্বয়ের চিন্তার জন্যও আলোচিত হন শাহবাজ শরিফ। ২০১৮ সালে সাংবাদিকদের সামনে শাহবাজ বলেন, ‘পাকিস্তানে নানা সংকট মোকাবিলায় বেসামরিক ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’