৪৮ বছর পর সন্তানের মরদেহ পেলেন মা!
এক সপ্তাহ বয়সেই মারা যায় সন্তান। এরপরেই বিভিন্ন পরীক্ষার সময় গ্যারি নামক ওই নবজাতকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মরদেহ থেকে বের করে নেওয়া হয়। এরপরে কফিনে সমাহিত করা হয়। দিন গড়াতেই সন্দেহ দানা বাধে মা লিদিয়ার মনে। পরে খোলা হয় কফিন, তাতে মেলে না কিছুই। এরপরেই সন্তানের মরদেহ পেতে লড়াই শুরু করেন তিনি। অবশেষে ছেলের মৃত্যুর ৪৮ বছর পর সন্তানের মরদেহ পেলেন ক্যানসারে আক্রান্ত সেই মা। স্কটল্যান্ডের ঘটনাটি এক প্রতিবেদনে আজ শুক্রবার (১৭ মার্চ) জানিয়েছে বিবিসি।
প্রতিবেদনে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমটি জানিয়েছে, ছেলের মৃত্যুর প্রায় ৫০ বছর সন্তানের মরদেহ ফেরত পেলেন গুরুতর অসুস্থ এক স্কটিশ মা। ১৯৭৫ সালে লিদিয়া রেইডস নামের ওই নারীর একটি ছেলে শিশু জন্ম হয়, যার নাম রাখা হয় গ্যারি। জন্মের সপ্তাহখানেকের মাথায় সে মারা যায়।
পরে, লিদিয়া বুঝতে পারেন তাঁর সন্তানের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো পরীক্ষার জন্য বের করে নেওয়া হয়েছিল। আর পাঁচ বছর আগে বিশেষজ্ঞরা গ্যারির কফিনে কোনো মানুষের দেহাবশেষের সন্ধান পায়নি।
পেটের ক্যানসারে আক্রান্ত ৭৪ বছর বয়সী মা লিদিয়া বলেন, ‘মৃত্যুর আগে সন্তানকে যথাযথভাবে সমাহিত করতে পারব, এটাই আমার কাছে আনন্দের।’ গ্যারির বিষয়টি তদন্ত করেছে স্কটল্যান্ডের ক্রাউন অফিস। তারা বলছে, ‘বেআইনিভাবে শরীরের অঙ্গ বের করার কোনো অপরাধ বা তথ্য আমরা তদন্তে পায়নি।’
সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে লিদিয়া বলেন, ‘ছেলের দেহ পেতে আমি মরিয়া ছিলাম। অবশেষে পেলাম। মা হিসেবে এখন আমার কেমন লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আমার ছেলেকে শেষ পর্যন্ত কবর দেওয়া হবে, এটা অবাস্তব মনে হচ্ছে। আমি মরার আগে তাকে সমাহিত করতে পারব। আমি স্বস্তি অনুভব করছি।’
বর্তমানে ইডিনাবার্গের ওয়েস্টান জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে লিদিয়া। এই মা বলেন, ‘আগামীকাল অর্থাৎ শনিবার গ্যারির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হবে। এতে আমি অংশ নেব ও সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা নিজে দেখব।’
অবৈধভাবে মৃত শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গবেষণার জন্য নেওয়া স্কটল্যান্ডে নতুন নয়। দেশটির হাসপাতালগুলোতে এই কাজ হয়ে আসছে। এর বিরোধী যেসব ক্যাম্পেইং চলছে সেগুলোতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন লিদিয়া।
অভিবাবকদের না জানিয়ে মৃত শিশুদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকারও করেছে স্কটল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস)। ১৯৭০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত স্কটল্যান্ডের বিভিন্ন হাসপাতালে শিশুদের ছয় হাজার শিশুর অঙ্গ ও টিস্যু নেওয়া হয়েছে।
লিদিয়া বলেন, ‘ছেলের মৃত্যুর পর যখন আমি তাকে দেখতে চাই, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে আরেক শিশুর মরদেহ দেখায়।’ কয়েক বছর আগে লিদিয়া বুঝতে পারেন, গবেষণার জন্য তাঁকে না বলে ছেলের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেওয়া হয়। সেগুলো বর্তমানে এডিনবার্গ রয়্যাল ইনফার্মারিতে রাখা হয়েছে। লিদিয়া বলেন, ‘আমার সন্তানের গোটা দেহটি কোথায়, আমি এখনও জানি না।’
নিজের সন্তানের দেহের খোঁজে আদালতের দ্বারস্ত হন লিদিয়া। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে গ্যারির কথিত কবর খুঁড়ে দেখার জন্য জন্য বলে আদালত। পরে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা কফিনে কোনো দেহ না পাওয়ার কথা জানান। সমাধিস্থলে একটি শাল, একটি টুপি, একটি ক্রস ও একটি নামের ট্যাগ পাওয়া যায়। এমনকি, সেখানে একটি বিচ্ছিন্ন কফিন খুঁজে পায়। তবে, মানুষের কোনো কঙ্কাল বা দেহ পচনের কোনো চিহ্ন পায়নি।
এই কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ দেম সু ব্ল্যাক। ওই সময় তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন, ‘কোনো মরদেহ সেই কফিনে রাখা হয়নি, আমি শতভাগ নিশ্চিত।’
লিদিয়া বলেন, ‘৭০ দশকেই গ্যারির অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা হয়। আমি এখন বুঝতে পারছি, সেখানে আমার ছেলের মরদেহ ছিল না। এটি খালি ছিল। বিষয়টি খুব ভয়ানক।’
মৃত ছেলের দেহের সঙ্গে কী করা হয়েছে তা জানতে দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করছিল লিদিয়া। ২০২২ সালে ক্রাউন অফিসের সামনে অনশনে বসেন তিনি। লিদিয়া বলেন, “তারা আমার সন্তানের দেহ নিয়ে আমাকে বোকা বানাতে চেয়েছিল। তারা আমাকে বলেছিল, ‘আমার ছেলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়ে গেছে। সেটি কীভাবে ফেরত দেবে।’ আর এখন বোঝা যাচ্ছে সেই কফিন ফাঁকা ছিল।”