নিরাপত্তা শঙ্কায় ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে তসলিমা
নিরাপত্তা শঙ্কায় ভারত ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন লেখিকা তসলিমা নাসরিন। দ্য সেন্টার ফর ইনকোয়ারি (সিএফআই) নামক যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) তাঁকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নিয়ে গেছে। এনজিওটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির সূত্রে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতীয় উপমহাদেশের মৌলবাদীদের অব্যাহত হত্যার হুমকির প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারকে তসলিমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে বেসরকারি সংস্থাটি।
সংস্থাটির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মুক্তচিন্তার কর্মী তসলিমা নাসরিন গত ২৭ মে নিউইয়র্কে পৌঁছেছেন। তাঁকে সহায়তার জন্য একটি জরুরি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ জন্য গত মঙ্গলবার সংস্থাটির দাতা ও অন্যান্য সাধারণ সদস্যের কাছে আবেদনও পাঠানো হয়েছে।
সংস্থাটি জানায়, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ব্লগার অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান ও অনন্ত বিজয়ের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে আরো বলা হয়, তসলিমা নাসরিন যদি কোনো কারণে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে থাকতে না চান, তাহলে স্বল্প সময়ের জন্য তাঁর নিরাপত্তা দেবে সিএফআই।
সিএফআইর প্রধান নির্বাহী ও সভাপতি রোনাল্ড এ লিন্ডসে স্বাক্ষরিত ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘মানবাধিকারের জন্য লড়াই ও মৌলবাদকে চ্যালেঞ্জ দেওয়া’ তসলিমা নাসরিনকে ‘বিশ্বের সব বয়সের মানুষের জন্য রোল মডেল’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রোনাল্ড এ লিন্ডসে আরো বলেন, ‘আন্তর্জাতিকভাবে অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব তসলিমা নাসরিন। তাঁর বক্তব্য ও দর্শন যেকোনো বয়সের মানুষকে প্রথার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করতে, মতবাদকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং মানবাধিকারের জন্য লড়তে ও কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মৌলবাদীদের প্রাণনাশের হুমকির জেরে ১৯৯৪ সাল থেকে গত দুই দশকের নির্বাসনে কখনো আমেরিকা বা ইউরোপ, কখনো ভারতে কাটিয়েছেন তসলিমা। ২০০৪ সাল থেকে তিনি নিয়মিত ভারতে থাকার অনুমতি পেয়ে আসছিলেন। এর পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় থাকতেন তিনি।
কিন্তু ২০০৭ সালে পশ্চিমবঙ্গের বামফ্রন্ট সরকার তাঁর ওই অনুমোদন বাতিল করে। এর পর তিনি দেশটির রাজধানী নয়াদিল্লিতে চলে যান।
সম্প্রতি বাংলাদেশে কয়েকজন ব্লগার খুনের ঘটনার পর টুইটার ও ফেসবুকে তাঁকে খোলাখুলি খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। উদ্বিগ্ন তসলিমা ভারতীয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গেও দেখা করার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে তিনি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও বক্তব্য দিয়েছিলেন। সম্ভবত একই সঙ্গে তিনি অন্যত্রও সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছিলেন।
যদিও সিএফআই সংস্থাটি জানিয়েছে, আমেরিকায় তসলিমার থাকাটা নেহাত সাময়িক, যেহেতু বৈধ ভিসা ছাড়া তিনি বেশিদিন সেখানে থাকতে পারবেন না। তাঁর প্রাণসংশয় হতে পারে, শুধু এ কারণেই সিএফআই নিজেদের আপৎকালীন তহবিল থেকে তসলিমার সে দেশে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে।