নওয়াজের ৬৫ দিন বিদেশ ভ্রমণ, পাকিস্তানের ব্যয় ৪৭ কোটি টাকা
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৩৭তম নিম্ন জিডিপির দেশ পাকিস্তান। দেশটির একজন সাধারণ মানুষের মাথাপিছু মাসিক আয় মাত্র ১১৬ মার্কিন ডলার বা নয় হাজার ৯৭ টাকা। আর সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী এক মাসে শুধু বিদেশ সফর বাবদ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে খরচ করেন প্রায় দেড় কোটি টাকা।
চলতি সপ্তাহে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ অধিবেশনে নওয়াজ শরিফের বিদেশ সফর সংক্রান্ত এসব তথ্য জানায় দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুন মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে নওয়াজ শরিফ ১৭ বার যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন। চারবার গেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে এবং তিনবার চীনে।
নওয়াজ শরিফ পাকিস্তানের শীর্ষ ধনীদের একজন। রীতিমতো ধনকুবের প্রধানমন্ত্রী তিনি। তাঁর সম্পদের পরিমাণ এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা সাত হাজার ৮৪২ কোটি ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাওয়া সরকারি বেতন ১৬০০ ডলার বা এক লাখ ২৫ হাজার ৪৮২ টাকা তিনি নিজে গ্রহণ না করে পাকিস্তানের গণশিক্ষা প্রকল্পে অনুদান হিসেবে দিয়ে দেন।
তবে বিদেশ সফরগুলো রাষ্ট্রীয় খরচেই করেন তিনি। আর তাঁর এই বিদেশ সফরের জন্য প্রতিবছর পাকিস্তান সরকারকে গুনতে হয় ২.২ মিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী তাঁর বর্তমান মেয়াদের এক-পঞ্চমাংশ সময়ই কাটিয়েছেন বিদেশ সফর করে। ২০১৩ সালের জুন মাসে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ৬৫ বার বিদেশ ভ্রমণে গেছেন নওয়াজ শরিফ।
৬৫ দফায় মোট ১৮৫ দিন বিদেশে অবস্থান করেছেন নওয়াজ শরিফ ও তাঁর কর্মকর্তারা। এতে সব মিলে খরচ হয়েছে ছয় মিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশী টাকায় দাঁড়ায় ৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে খরচ হয়েছে গড়ে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
অন্যদিকে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিষদের ২৫৬টি অধিবেশনের মধ্যে নওয়াজ শরিফ অংশ নিয়েছেন মাত্র ৩৬টিতে।
গত সপ্তাহে চালানো এক সাধারণ জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকের বেশি সাধারণ পাকিস্তানি মনে করেন, নওয়াজ শরিফ প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি সময় বিদেশ সফরে কাটান।
দেশটির বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফের জ্যেষ্ঠ সদস্য সাফকাত মেহমুদ এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘আমাদের সব সমস্যাই অভ্যন্তরীণ। সন্ত্রাসবাদ, সুশাসনের অভাব, স্কুলগুলোতে হামলা হওয়া এবং ৬৫টি বিদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রীর ছয় মিলিয়ন ডলার খরচ করা, সবই অভ্যন্তরীণ সমস্যা।’
তবে নওয়াজ শরিফের বিদেশ সফরগুলোতে অতিরিক্ত ব্যয় করা হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘নওয়াজ শরিফের সঙ্গে থাকেন ১৭ সদস্যের পরিষদদল। কিন্তু আপনি যদি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি অথবা রাজা পারভেজ আশরাফের দিকে নজর দেন তাহলে দেখবেন তাঁরা প্রায় ১০০ জনের দল নিয়ে বিদেশ সফরে যেতেন। এটা দেখলেই তো আপনি পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন।’
নওয়াজ শরিফের রাজনৈতিক দল পাকিস্তান মুসলিম লীগের দাবি, ঘন ঘন এই বিদেশ সফরের মাধ্যমে দেশের জাতীয় উন্নয়নে কাজ করছেন তিনি।
দলটির নেতা এবং জাতীয় পরিষদের সদস্য দানিয়েল আজিজ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর চেষ্টায় পাকিস্তানে সাড়ে ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। এর মাধ্যমেই নওয়াজ শরিফের বিদেশ সফরের যৌক্তিকতা প্রমাণিত হয়।’