যুদ্ধের ঘোষণা ইসরায়েলের, হামাসের লক্ষ্য স্বাধীনতা
ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। আজ রোববার (৮ অক্টোবর) দেশটির নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা থেকে বলা হয়, মৌলিক আইনের ৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুচ্ছেদটি সরকারকে উল্লেখযোগ্য সামরিক পদক্ষেপের নির্দেশ দেওয়ার অনুমতি দেয়। আর গতকালই হামাস জানায়, তাদের লক্ষ্য স্বাধীনতা। খবর আল-জাজিরার।
পাল্টাপাল্টি হামলার জেরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে অধিকৃত পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা ও ইসরায়েল। এর শুরুটা হয়েছিল ফিলিস্তিনের সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলার মাধ্যমে।
গতকাল শনিবার সকালে সকালের দিকে ইসরায়েলে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। পাশাপাশি একটি ইসরায়েলি বসতিতে ঢুকে পড়ে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। আর এতেই প্রাণ হারান অনেকে। আর হামাসের অনবরত রকেট হামলার জেরে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ইসরায়েলের বেশ কয়েকটি শহর।
হামাসের আকস্মিক হামলায় হতভম্ব হয়ে পড়ে ইসরায়েল। পাল্টা আক্রমণও শুরু করে তারা। গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরে একের পর এক বিমান হামলা চালায় তারা। এতে রক্তাক্ত হয় গাজা ও পশ্চিম তীর।
ইসরায়েলের রাজধানী তেল আবিবের উত্তরের এলাকা পর্যন্ত রকেট হামলা চালায় হামাস। এ ছাড়া ইসরায়েলের দক্ষিণেও তাদের যোদ্ধাদের পাঠায় সংগঠনটি। ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বিভিন্ন ফুটেজে দেখা যায় হামাসের যোদ্ধারা সিদেরত শহরে পথচারীদের ওপর গুলিবর্ষণ করছে। ইসরায়েলিদের বেশকিছু জমায়েত কেন্দ্রেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হামাস।
এ ছাড়া ইসরায়েলের বেশকিছু রাস্তায় বন্দুকধারীদের সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়তেও দেখা যায়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে কাফার আজা, সিদেরত, সুফা, নাহাল ওজ, মাগেন, বেইরি নামের ছোট ছোট শহরে। টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, রেইম সামরিক ঘাঁটিতেও হামলা করে হামাস।
অন্যদিকে ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের হামলায় নিহতের সংখ্যা ছয় শতাধিক ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত দুই হাজারেরও বেশি ইসরায়েলি। ইসরায়েলের স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল-জাজিরা। তবে, হতাহতের বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বরাতে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় অন্তত ৩১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। সেখানেও আহতের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর মেগানে এখনও দুপক্ষের সম্মুখ যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েলে গণমাধ্যম দ্য টামস অব ইসরায়েল বলছে, মেগানে তীব্র গোলাগুলি চলছে। ট্যাংক থেকেও গোলা ছোঁড়া হচ্ছে।
আল-জাজিরা জানিয়েছে, সংঘর্ষের জেরে ইসরায়েলের সমস্ত স্কুল দুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির শিক্ষামন্ত্রী ইয়োভ কিশ বলেন, ‘সোমবার ও মঙ্গলবার দেশের সমস্ত স্কুলসহ দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমই বন্ধ থাকবে।’
গতকাল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠীটির উপপ্রধান সালেহ আল-আরুরি বলেন, ‘স্বাধীনতার জন্যই আমাদের এই লড়াই।’ আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘এটি কোনো অভিযান নয়। আমরা সর্বাত্মক একটি লড়াই শুরু করেছি। আমাদের ধারণা, এই লড়াই চলবে ও তা বিস্তৃত হবে। আমাদের লক্ষ্য একটাই, আমাদের স্বাধীনতা ও পবিত্র স্থাপনাগুলোর মুক্তি।’
হামাসের উপপ্রধান আরও বলেন, ‘ নিজেদের স্বাধীনতা, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে লড়াই ও তাদের পবিত্র স্থানগুলো রক্ষা করার অধিকার রয়েছে ফিলিস্তিনিদের। বিজয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই লড়াই চালিয়ে যাবো।’
সাক্ষাৎকারে আল-জাজিরাকে এই হামাস নেতা বলেন, ‘আমরা সবচেয়ে বাজে অবস্থা দেখতেও রাজি আছি। যেকোনো পরিস্থিতি এখন সম্ভব। আমরা ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত।’
সালেহ আল-আরুরি বলেন, ‘আমরা অনেক ইসরায়েলি যোদ্ধাকে হত্যা ও আটক করেছি। লড়াই এখনও চলমান। ইসরায়েলে আটক ফিলিস্তিনি বন্দিদের আমি বলতে চাই, আপনাদের স্বাধীনতা ফিরে আসবে। কারণ, বিনিময়ের জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট ইসরায়েলি বন্দি রয়েছে। লড়াই যত দীর্ঘস্থায়ী হবে ততই বন্দির সংখ্যা বাড়তে থাকবে।’