ক্ষমতা ছাড়ার আগে ছেলেকে ক্ষমা করলেন জো বাইডেন
ছেলের আইনি সমস্যায় হস্তক্ষেপ করবেন না এমন আশ্বাস দেওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল রোববার (১ ডিসেম্বর) এক অফিস আদেশে দুটি ফৌজদারি মামলায় সাজার মুখোমুখি হওয়া ছেলে হান্টার বাইডেনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা করে দিয়েছেন। খবর এএফপির।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এ বিষয়ে গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হান্টারের মামলার ঘটনাগুলো দেখে যৌক্তিকভাবে কোনো ব্যক্তি যদি এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেন যে, তাকে শুধু আমার ছেলে হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে তবে, তা ভুল হবে।’
এই সিদ্ধান্তটি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতাকে আবারও যাচাইয়ের মুখে ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আর এটা এমন সময়ে হলো যখন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই তার অনুসারিদের এফবিআই এবং বিচার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
এ বছরের শুরুর দিকে হান্টার বাইডেন বন্দুক কেনার সময় তার মাদক ব্যবহারের তথ্য গোপন করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন এবং অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হন। পাশাপাশি তিনি কর ফাঁকির একটি মামলাতেও দোষী প্রমাণিত হন। তবে, তিনি অপরাধের সাজা ভোগ করেননি।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগে বলেছিলেন, তিনি ছেলেকে কখনো ক্ষমা করবেন না। তবে, রোববারের বিবৃতিতে জো বাইডেন বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে আমি বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করব না। আমি আমার কথা রেখেছি। যদিও, আমি দেখেছি যে আমার ছেলেকে আলাদাভাবে এবং অন্যায়ভাবে বিচার করা হয়েছে।’
জো বাইডেন বলেন, ‘কংগ্রেসে আমার রাজনৈতিক বিরোধীদের মধ্যে কয়েকজন আমাকে আক্রমণ করে ও আমার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিরোধিতা করতে তাদের প্ররোচিত করার পরেই হান্টারের মামলার অভিযোগগুলো আনা হয়েছিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বাস করি, তবে এর সঙ্গে আমাকে করসৎ করতে হয়েছে। আমি যেহেতু এর সঙ্গে লড়াই করেছি, তাই আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, অপরিণত রাজনীতি এই প্রক্রিয়াটিকে সংক্রমিত করেছে এবং এর ফলে ন্যায়বিচারের অকাল মৃত্যু ঘটে।’
হান্টার বাইডেনকে ক্ষমার ঘোষণাটি এমন সময়ে এলো যখন জো বাইডেনের রিপাবলিকান প্রতিপক্ষ ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাগুলোর রায় সুপ্রিম কোর্টের মাধ্যমে স্থগিত হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে এটাই নিশ্চিত হয়েছে যে, জো বাইডেনের প্রতিপক্ষকে জেলে যেতে হবে না। যদিও, দোষী সাব্যস্ত করে তার বিরুদ্ধে যুগান্তকারী রায় দেওয়া হয়েছিল।
এর আগেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা তাদের পরিবারের সদস্যদের ও রাজনৈতিক মিত্রদের ক্ষমা করে দিয়েছেন এমন নজির রয়েছে। বিল ক্লিন্টন তার সৎ ভাইকে কোকেন মামলায় দোষী হওয়ার পর ক্ষমা করেছিলেন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প তার জামাইকে কর ফাঁকির মামলা থেকে রেহাই দিয়েছিলেন। যদিও আসামি হিসেবে তারা কারাদণ্ড ভোগ করছিলেন।
এ ছাড়া এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় গেলে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ইউএস ক্যাপিটলে প্রাণঘাতি দাঙ্গায় জড়িত এবং পরে কারাদণ্ডে দণ্ডিত সমর্থকদের ক্ষমা করে দেবেন এমন ঘোষণাও দিয়েছিলেন।
হান্টার বাইডেন সেপ্টেম্বর মাসে কর ফাঁকির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন যাতে তাকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া বন্দুক কেনার মামলায় তাকে ২৫ বছরের সাজা দেওয়া হয়েছিল।