যুক্তরাজ্যের সড়কে নামল চালকবিহীন গাড়ি
যুক্তরাজ্যের চারটি এলাকায় আজ বুধবার থেকে চালু হলো চালকবিহীন গাড়ি। দেশটির পরিবহন চলাচলের আইনে একটি প্রস্তাবের কারণেই জনগণ আজ থেকে এই পরীক্ষামূলক চালকবিহীন গাড়ির যাত্রী হতে পারবেন।
লন্ডনের গ্রিনিচে যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা উপস্থিত থেকে পরীক্ষামূলক চালকবিহীন গাড়ি চলাচলের উদ্বোধন করার কথা। একই সঙ্গে চালকবিহীন গাড়ি চালু হবে বাকিংহ্যামশায়ার, মিল্টন কেইনেস ও কভেন্ট্রিতে।
এর আগে যুক্তরাজ্যে চালকবিহীন গাড়ি চলার এলাকাগুলোর বাস্তব অবস্থা ধারনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ২২টি ক্যামেরা ও সেন্সর ব্যবহার করে এলাকাগুলোর রাস্তা ও চারপাশের ছবি তোলা হয়।
যুক্তরাজ্যের যোগাযোগমন্ত্রী ক্লেয়ার পেরি বলেন, যানবাহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ হলো চালকবিহীন গাড়ি। নতুন প্রযুক্তির উন্নয়নে তিনি যুক্তরাজ্যকে এগিয়ে রাখতে চান। এতে অর্থ বিনিয়োগেরও একটি নতুন খাতের সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, চালকবিহীন গাড়ি পূর্ণতা পেতে সময় নেবে, তবে আজকের পদক্ষেপও গুরুত্বপূর্ণ।
আশা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই চালকবিহীন গাড়ি প্রযুক্তি পূর্ণতা লাভ করবে। দেড় দশকের মধ্যেই এই প্রযুক্তি নিরাপত্তাও বাড়বে।তখন ইন্টারনেট-ভিত্তিক এসব চালকবিহীন গাড়ি যাত্রীদের নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে কথা বলা ও বিনোদন প্রদানেও সক্ষম হবে।
যুক্তরাজ্যের প্রযুক্তির উন্নয়নে এগিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যোগে গুগলসহ বিশ্বের নামকরা সব প্রযুক্তি ও যানবাহন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করছে।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের লাসভেগাসে সিবিএস মেলায় বিএমডব্লিউ চালক বিহীন গাড়ি প্রদর্শনকালে এর সংশ্লিষ্ট কয়েকটি প্রযুক্তিও প্রদর্শন করে। অডি কোম্পানির তৈরি চালকবিহীন গড়ি সান ফ্রানসিসকো থেকে নেভাদা পর্যন্ত টানা চলেছে। মার্সিডিজ ও অন্যন্য গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও এ ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই।
কয়েক বছর ধরেই ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়ি অঞ্চলে নিজেদের প্রধান কার্যালয়ের কাছে চালকবিহীন গাড়ির পরীক্ষা চালাচ্ছে গুগল। তাদের দাবি ২০২০ সালের মধ্যেই এই প্রযুক্তি মূল ধারায় চলে আসবে।
প্রযুক্তি পণ্য নির্মাতা অ্যাপলও চালকবিহীন গাড়ি নির্মাণে যুক্ত হচ্ছে বলে অনেকে মনে করেন। সম্প্রতি অ্যাপলের পক্ষ থেকে গাড়ি নিবন্ধিত করা হয়েছে। কয়েকটি ক্যামেরা নিয়ে গাড়ির পরীক্ষাও চালানো হচ্ছে।
অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে নিজের দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাজ্য। এরই মধ্যে চালকবিহীন গাড়ি উৎপাদন বাড়াতে সরকার এক কোটি ৯০ লাখ পাউন্ড বিনিয়োগ করেছে।
ট্রাফিক লাইট মেনে চলা, রাস্তায় কোনো যানবাহন বা ব্যক্তির অবস্থান বোঝায় চালকবিহীন গাড়ি সাফল্য পেয়েছে। তবে এখনো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গেছে। খারাপ আবহাওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও অস্থায়ী ট্রাফিক লাইটে চালকবিহীন গাড়ি কিছুটা সমস্যায় পড়ে। একই সঙ্গে কোনো ব্যক্তি ও পুলিশ বুঝতেও এই প্রযুক্তির সমস্যা রয়ে গেছে। তাই বর্তমানে চালকবিহীন গাড়ির চলাচলের এক প্রস্তাবে জরুরি প্রয়োজনে গাড়িতে একজন প্রশিক্ষিত চালক রাখার কথাও বলা হয়েছে।
এরই মধ্যে ব্রিটেনের অনেক এলাকায় চালকবিহীন গাড়ি চলার ইতিবাচক ও নেতিবাচক বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা চলছে। পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে ট্রাফিক জ্যাম ও সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাসে এই প্রযুক্তি কতটা ভূমিকা রাখতে পারে।
চালকবিহীন গাড়ির যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়েও গবেষণা হচ্ছে। একই সঙ্গে চালকবিহীন গাড়ি চলাচলে কী কী আইনি জটিলতা হতে পারে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের নাগরিকরা প্রতি বছর গড়ে ২৩৫ ঘণ্টা গাড়ি চালান। যা ছয় সপ্তাহের কর্মঘণ্টার সমান। চালকবিহীন গাড়ি পুরোপুরি চলার অনুমতি পেলে এই গাড়ি চালানোর হাত থেকে সবাই মুক্তি পাবে।