অগ্নিকাণ্ডে পুড়ল শহীদ লে. কমান্ডার মোয়াজ্জেমের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি
ঐতিহাসিক আগরতলা মামলার দুই নম্বর আসামি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মৃতিবিজড়িত পিরোজপুরের বাড়িটি অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার ভোরে পিরোজপুর সদর উপজেলার পশ্চিম ডুমরিতলা এলাকায় কমান্ডার মোয়াজ্জেমের বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পিরোজপুর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার আবু জাফর বিকেলে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা জানান, আগুন লাগার পরে প্রায় দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দমকল বাহিনীর সদস্যরা এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের ছোট ভাই মাহামুদুর রহমান টুনু বলেন, ফজরের নামাজের পরে আমরা হাঁটতে বের হই। সে সময় রাস্তায় বসে খবর পাই বাড়িতে আগুন লেগেছে। পরে আমরা ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেই এবং স্থানীয়রা আগুন নেভাতে চেষ্টা করে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে অনেক চেষ্টা করে আগুন নেভায়। কিন্তু ততক্ষণে সব পুড়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মাহামুদুর রহমান আরো বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের জন্মস্থান এই বাড়িটি। এই বাড়িটিও পুড়ে গেল। যেভাবেই পুড়ুক আমি ছোট ভাই হিসেবে দাবি করছি আমার এই ভাইটার স্মৃতি যেন কোনোদিন মলিন না হয়।’
স্থানীয় পৌর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুহা. নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, ‘স্থানীয়ভাবে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে আসি। শহীদ লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনের স্মৃতিবিজড়িত শতবর্ষী বাড়িটি যাতে আবারো সুন্দরভাবে পুনর্নির্মাণ করাসহ একটি স্মৃতি জাদুঘর তৈরি করা হয় তার জন্য আমি সরকারের কাছে দাবি করছি।’
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আবু জাফর জানান, স্থানীয়রা আগুন লাগার খবর দিলে তারা তিনটি গাড়ির মাধ্যমে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ঘরে কেউ না থাকায় হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিটের মাধ্যমে আগুন লাগতে পারে। পরে তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত জানানো হবে।
১৯৬৭ সালের আগরতলা মামলার দুই নম্বর আসামি লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেম হোসেনকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোরে ৩২ পাঞ্জাবের কর্নেল তাজের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা তার ৩৬ এলিফ্যান্ট রোডের বাসায় হামলা চালিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাঁর মৃতদেহ সামরিক জিপের পেছনে রশি দিয়ে বেঁধে রাস্তা দিয়ে টেনে ঢাকা সেনানিবাসে নেওয়া হয়। তাঁর প্রিয়জনেরা এখনো লাশের সন্ধান পাননি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগের অনন্য অবদানের জন্য ২০১২ সালে তাঁকে ‘স্বাধীনতা পদক’ প্রদান করা হয়।