অবশেষে শীত এলো শহরে, ভিড় বেড়েছে ফুটপাতে
জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে আবহাওয়ার তারতম্যে এবার দেশে শীতের দেখা মিলছে কিছুটা দেরিতেই। কার্তিক পেরিয়ে গেলেও শহরে কুয়াশার দেখা মিলেনি। অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ পার হতে চলেছে তবু শহুরে মানুষের মধ্যে শীতের অনুভূতি সামান্যই।
আজ শনিবার আবহাওয়া অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গতকাল শুক্রবার থেকে আকাশ মেঘলা রয়েছে। দেশের কয়েকটি জায়গায় হালকা বৃষ্টিও হয়েছে। এটি আগামীকাল রোববার পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।
মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এর পরই মেঘ কেটে গিয়ে দেখা মিলবে সূর্যের হাসির। আগামী সোমবার থেকে সকালের সোনারোদে অনুভূত হবে শীতের আমেজ।
এর আগে আজ শনিবার গ্রামের পাশাপাশি শহরেও কুয়াশার দেখা মিলছে। যদিও গ্রামের প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হয়েছে কিছুটা আগেই। এবার শীত আসছে শহরেও। তাই শীত মোকাবিলায় মানুষের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার ফুটপাতের দিকে তাকালেই দেখা মিলে রঙ-বেরঙের বাহারি শীতের পোশাকের। আর এসব দোকান ঘিরে এখন সারাক্ষণ ভিড় করে আছে শহুরে নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্তের একটা অংশ।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর এই শীতকে কেন্দ্র করেই কিছুটা ব্যস্ততা তৈরি হয়েছে দোকানিদের। রাজধানীর দোকান ও ফুটপাতে শুরু হয়ে গেছে শীতবস্ত্রের জমজমাট বেচাকেনা। বিক্রেতারা জানালেন, হালকা ও মাঝারি ধরনের গরম পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে।
আজ দুপুরে রাজধানীর ফুলবাড়ীয়ার বঙ্গবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন ধরনের কম্বল, সোয়েটার, টুপি, পায়ের মোজা, হাতমোজা, মাফলার, সুয়েটার, জাম্পার, ফুলহাতা গেঞ্জির দোকানেই বেশি ভিড় দেখা করছে ক্রেতারা। এ ছাড়া রাজধানীর বায়তুল মোকারমের পাশের ফুটপাতে, জিপিওর সামনে এবং মুক্তাঙ্গণ ঘেঁষে স্বল্প আয়ের অনেকে দাম-দর করে কিনছে শীতের পোশাক।
বঙ্গবাজারের পাইকারি কাপড়ের ব্যবসায়ী সাগর মিয়া (৪৫) এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গত সপ্তাহে খুচরা ব্যবসায়ীরা অনেক মালামাল কিনে নিয়ে গেছে। এখন শীত পড়া শুরু হয়েছে, তাই আরো কম্বল বিক্রি হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এখানে দেড়শ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার ২০০ টাকার কম্বল আছে। এ ছাড়া বিদেশি কম্বল দুই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে।’
বায়তুল মোকাররমের ফুটপাত থেকে নিজের সন্তানদের জন্য শীতের কাপড় কিনতে এসেছেন রহিমা আক্তার (৪০)। তিনি পরিবার নিয়ে শনির আখড়া এলাকায় থাকেন। এরই মধ্যে কয়েকটি শীতের পোশাকও কিনেছেন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ বছর বাচ্চাদের শীতের কাপড় কিনতে এসেছি। অনেকেই দেখি বাচ্চাদের জন্যই কিনছে। মনে হয়, এটাই বেশি বিক্রি হচ্ছে।’
এবার দাম কেমন- জানতে চাইলে এই গৃহবধূ বলেন, ‘একটু বেশিই মনে হচ্ছে। প্রথম প্রথম তো এ কারণেও হতে পারে। আগে যেটা ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় কেনা যেত এখন সেটা কিনতে হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।’
পাশের জিপিওর সামনে থেকে শীতের কাপড় কিনতে দরাদরি করছিলেন সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক হুমায়ুন কবীর (৩৫)। তিনি বলেন, ‘আজকে আবহাওয়া খারাপ দেখে মনে হচ্ছে সামনে শীত পড়বে। তাই আজকে পরিবারের সবার জন্য শীতের পোশাক কিনতে আসছি। দাম একটু বেশি চাইলেও ভালোটা নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
বায়তুল মোকাররমের সামনের ফুটপাতে শীতের নানা পোশাক নিয়ে বসেছেন মো. আবদুল্লাহ হক (৫০)। তিনি জানালেন, করোনার কারণে এ বছর ব্যবসা প্রায় নাই বললেই চলে। শীতের মৌসুমকে কেন্দ্র করে দোকানে নতুন মালামাল উঠিয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, ‘এখন শীতের পোশাক কিনতে লোকজন কিছু কিছু আসতাছে। আমাদের তো ব্যবসা নাই। এখন যদি কিছুটা হয়। গত সপ্তাহ থেকে শীতের পোশাকের বেচাবিক্রি বাড়ছে। সামনে আরেকটু বাড়তে পারে।’
তবে এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আবার করোনাও বাড়তাছে। মানুষ যদি আর ঘর থেকে না বাইর হইতে পারে তাইলে তো ব্যবসা বসে যাবে। এই চিন্তাও আছে।’