অবৈধ সম্পদ অর্জন : জামিন পাননি সেলিম প্রধান
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ক্যাসিনোকাণ্ডের অন্যতম হোতা সেলিম প্রধানের জামিন নাকচ করে দিয়েছেন আদালত।
আজ রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আসাদ মো. আসিফুজ্জামান এই আদেশ দেন। এ দিন আদালতে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ব্যাংকের দুই কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন। সাক্ষীরা হলেন- ন্যাশনাল ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল ইসলাম ও নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট মুন্সী আবু জাকারিয়া।
আদালতে দুদকের সরকারি কৌসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, এ মামলায় এ পর্যন্ত ২৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী শাহিনূর রহমান অণী জামিনের আবেদন করেন। এ পরে শুনানি শেষে বিচারক অপরাধ গুরুতর বিধায় জামিনের আবেদন নাকচ করেন। এরপরে বিচারক আগামী ১৯ অক্টোবর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য করেন। এ মামলায় এ নিয়ে ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে।
আদালতে আসামি পক্ষের আইনজীবী শাহিনূর রহমান ও বাহার উদ্দিন বাহার শুনানিতে বলেন, এ মামলায় প্রসিকিউশন এ পর্যন্ত ২৬ জনের সাক্ষ্য এনেছেন। এর মধ্যে কোন সাক্ষী আদালতে এসে মামলার সপক্ষে ও সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। সেলিম প্রধান প্রায় তিন বছর ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন। এছাড়া আসামি থাইল্যান্ডের নাগরিক। তিনি নিয়ম মেনেই সেই দেশের সরকারের অনুমতি নিয়ে সাতটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তাই এখানে মানিলন্ডারিং এর কোন ঘটনা ঘটেনি।
অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের কৌসুলি মোশাররাফ হোসেন কাজল বলেন, এ মামলায় আরও সাক্ষী বাকি আছে। তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ না হলে এ মামলায় আসামির জামিন সমীচিন হবে না। তাদের বিরুদ্ধে অপরাধের মাত্রা গুরুতর। আসামি বাংলাদেশ থেকে টাকা নিয়ে অবৈধভাবে মানিলন্ডারিং করে থাইল্যান্ডে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এতে দেশের ও সরকারের ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া এই আসামিকে প্লেন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাই নতুন কোন গ্রাউন্ডস তৈরি হয়নি, যে কারণে আসামির জামিন দিতে হবে।
শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে দেন।
নথি থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবর আদালত এ মামলায় সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর দুদক উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় তার বিরুদ্ধে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছিল। এই উপ-পরিচালকই মামলাটি তদন্ত করে শেষ পর্যন্ত তার নামে মোট ৫৭ কোটির বেশি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছেন। এর আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে সেলিম প্রধান র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, দুর্নীতির মাধ্যমে ও ক্যাসিনো ব্যবসায় সেলিম প্রধান ৫৭ কোটি ৪১ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সম্পদ অর্জন করেছেন। এরমধ্যে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ৩৫ কোটি ৪১ লাখ ৯৭ হাজার টাকার। ক্যাসিনো থেকে অর্জিত ২১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা পাচার করেছেন থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে।
সেলিম জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং পেপার্সের চেয়ারম্যান। এ কোম্পানিতে তার ৪০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। ৬৯ হাজার শেয়ারের বিপরীতে এখানে বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে ৬৯ লাখ টাকা। তবে সেলিম প্রধানের নামে শেয়ার মানি ডিপোজিট পাওয়া গেছে ২৩ কোটি ৫৫ লাখ ৮৪ হাজার ৬৫০ টাকা। এ টাকা তিনি অর্জন করেছেন অবৈধভাবে। প্রিন্টিং পেপার্স কোম্পানি ২০১০ সালে মুনাফা করে ২৯ লাখ ৩৩ হাজার ৮৫৩ টাকা আর ২০১১ সালে ১ কোটি ৪৬ লাখ ২১ হাজার ৭২ টাকা। এখান থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৮ কোটি টাকা ঋণ নেন বলে সেলিম প্রধান তার ব্যক্তিগত আয়কর নথিতে উল্লেখ করেছেন। তবে এ কোম্পানি থেকে কীভাবে ঋণ নিয়েছেন এ সংক্রান্ত কোনো রেকর্ডপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।