আওয়ামী লীগনেতা জহিরুল হত্যায় ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৮ জনের যাবজ্জীবন
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল হক হত্যা মামলায় ১৩ আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আট আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান আজ রোববার এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবু আব্দুল্লাহ মিঞা এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন বসু মিয়া, কবির মিয়া, মোখলেছ, সাচ্চু মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, শহিবুর রহমান শুক্কি, লিয়াকত আলী, ইউনুছ মিয়া, রহমত উল্লাহ ওরফে ফারিয়াজ মিয়া, শিথিল আহম্মেদ ওরফে ফাহিম আহম্মেদ, সাইফুল, আলী মিয়া ও পাবেল। এর মধ্যে ফারিয়াজ মিয়া, ফাহিম আহম্মেদ, সাইফুল, আলী মিয়া ও পাবেল পলাতক রয়েছেন।
পিপি আরও বলেন, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন—নুরুল ইসলাম, হাবিবুর রহমান, রাসেল, মাজু মিয়া, গোলাপ মিয়া, সোহেল মিয়া, শাহজাহান ও বোরহান ওরফে রোহান। বিচারক তাদেরকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড এবং অনাদায়ে এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড ভোগের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘এই মামলার ডিসিষ্ট (ভিকটিম) জহিরুল হক নাটাই পাঁচ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সমাজসেবক ছিলেন। তিনি খুন হলে পরবর্তীতে তাঁর ভাই অধ্যক্ষ কবির হোসেন মামলা দায়ের করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনাটি খুবই নৃশংস। সেখানে সামান্য ঘটনা নিয়ে খুবই উত্তেজিত হয়ে একপক্ষ অপর পক্ষকে খুন ও জখমের মতো ঘটনা ঘটায়।’
বিচারক আরও বলেন, ‘এই মামলায় পরিকল্পনা অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল হককে বসু মিয়া কর্তৃক ভিকটিমকে পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্রের দ্বারা দুই হাতে গলা চেপে ধরলে গলা দিয়ে রক্ত পড়ে, বমি হয়। বাম হাঁটুর নিচে রগ কাটা জখম, মুখের ডান চোয়ালে ছিদ্র জখম, মাথার পিছনে থেতলানো জখম, বুকে-পিঠে-কোমড়ে পিটিয়ে জখম, বাম চোয়ালের ওপরে গুরুতর থেতলানো কালচে জখম, তলপেটে পা দিয়ে মুড়িয়ে জখমসহ কিলিয়ে, উষ্ঠিয়ে, লাথি দিয়ে সমস্ত শরীরে আঘাত করে, বুক থেকে পেট পর্যন্ত খোলা লম্বা কাটা মারাত্মক রক্তাত্ত গ্রিভিয়াস জখম করে খুন করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এ কারণে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ায় সমীচিন বলে মনে করেন অত্র ট্রাইব্যুনাল।’
নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর সন্ধ্যার পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তর পৌরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে নিজ গ্রাম পয়াগে ফিরছিলেন জহিরুল হক। পথে বসু মিয়া, হাবিবুর রহমান, শহিবুর রহমান ওরফে শুক্কি, কবির মিয়া, সাচ্চু মিয়া, মোখলেছ মিয়া, রুহান ওরফে বোরহান, শিথীল আহমেদ ওরফে ফাহিম আহমেদ, রহমত উল্লাহ ফারিয়াজসহ অন্য আসামিরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনাস্থলের পাশে অবস্থান করছিলেন। জহিরুল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুটি মোটরসাইকেলে করে আসামিরা তাঁর অটোরিকশা আটকায়। এরপর তাঁরা জহিরুলের ওপর হামলা চালান। অটোরিকশার চালক গোলাপ মিয়াকেও তাঁরা মারধর করেন।
ঘটনার সময় গোলাপ মিয়া অন্যদিক থেকে আসা আরেকটি অটোরিকশার চালককে বিষয়টি জানালে তিনি মোটরসাইকেল দুটি ধাওয়া করেন। পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া উত্তর পৌরতলা সিএনজি স্ট্যান্ডে থাকা লোকজনের সহায়তায় মোটরসাইকেল দুটিসহ আসামি শিথীল ও ফারিয়াজকে আটক করে পুলিশে দেওয়া হয়। জহিরুল হক ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনায় জহিরুলের ছোট ভাই কবির হোসেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।