আকিজ জুট মিলের এক শিফট বন্ধ, কর্মহীন ছয় হাজার শ্রমিক
রপ্তানি কমে যাওয়ায় এবং দেশের বাজারে পাটের মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ বেসরকারি পাটকল ‘আকিজ জুট মিলে’র ছয় হাজার ৩০০ কর্মীকে কাজে না আসতে বলে এক শিফট বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে আকিজ জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক শেখ আব্দুল হাকিম জানান, অস্থায়ী এসব শ্রমিকের বেতন দিয়ে কারখানাটি পুরোপুরি সচল রাখা যাচ্ছে না, এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন কারখানার অধিকাংশ শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘শিফট বন্ধ করার এই প্রক্রিয়াকে ছাঁটাই বলা যাবে না। এটাকে এক ধরনের ছুটি বলা যায়। এবং এজন্য কোন শ্রমিক অসন্তোষ হয়নি। আসলে তিন শিফটের কাজ আমরা দুই শিফটে করার চেষ্টা করছি। পাট অবিক্রিত রয়ে গেছে অনেক। গোডাউন ভরা পাটজাত পণ্য রয়েছে। শ্রমিকরা নিজেরাই এই অবস্থা বুঝে অনেকে আসছেন না। তারা অন্য কাজ করছেন।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ায় অবস্থিত আকিজ জুট মিল বেসরকারি খাতে পরিচালিত দেশের বৃহৎ পাটকল। এই জুট মিলে তিন শিফটে যশোর, খুলনা ও নড়াইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় সাত হাজার শ্রমিক কাজ করেন। প্রতিদিন তাদের ২৩টি বাসের মাধ্যমে কারখানায় আনা-নেওয়া করা হয়। মঙ্গলবার ১৫ নভেম্বর থেকে আকস্মিকভাবে বাস সার্ভিস বন্ধ করে দিয়েছে মিল কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ স্থায়ী ৭০০ শ্রমিক বাদে সবাইকে কাজে আসতে নিষেধ করেছে।
এ বিষয়ে মিলের সিবিএ সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ বাজারে গুণগতমানের পাট পাওয়া যাচ্ছে না এবং পাটের দামও অনেক বেশি। যে কারণে উৎপাদন সীমিত করেছে কর্তৃপক্ষ। মিলে প্রায় ছয় হাজার ৩০০ বদলি শ্রমিক রয়েছে। মূলত তাদেরই কাজে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। বাকি ৭০০ স্থায়ী কর্মী দিয়ে মিলের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তাছাড়া বৈদেশিক অর্ডারও কমে গেছে।’
মিলের নির্বাহী পরিচালক শেখ আব্দুল হাকিম জানান, তাদের পণ্য মূলত তুরস্কে যায়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদিত পণ্য পাঠানো যাচ্ছে না। আর পাঠাতে গেলে খরচও বেশি হচ্ছে। সেই সঙ্গে নতুন অর্ডারও কমে গেছে। এর পাশাপাশি দেশের বাজারে গুণগত মানের পাট পাওয়া যাচ্ছে না। যে পাট পাওয়া যাচ্ছে, এর দাম অনেক বেশি। সবমিলিয়ে তিন শিফটে উৎপাদন সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। লোকসান এড়াতে স্থায়ী শ্রমিকদের দিয়ে এখন দুটি শিফটে কাজ চলছে।
শেখ আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বদলি শ্রমিকদের কাজে আসতে নিষেধ করা হয়েছে। এ কারণে বাস সার্ভিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মিলের শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার পাওনা পরিশোধ করে দেওয়া হয়। বদলি শ্রমিকদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি কেউ তাদের মজুরি না পান, তাহলে মিলে যোগাযোগ করলে পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারখানার কার্যক্রম পূর্ণ উদ্যমে শুরু হবে আর তখন বদলি শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে পারবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।