‘আগে তাঁকে বাঁচতে দিন, তারপর বিচার করুন’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে করা মামলার অভিযোগ গ্রহণ করেছেন আদালত। এ ছাড়া আজ মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে জামিন শুনানি করা হলে বিচারক তাঁর জামিন নাকচ করে দেন।
জামিন শুনানির সময় সম্রাটের আইনজীবী বলেন, 'আগে তাকে বাঁচতে দিন। তারপর বিচার করুন। সম্রাট একজন হার্টের রোগী। তিনি ১৯৯৯ সালে ভারতের দেবী শেঠির অধীনে হার্টের সার্জারি করেন। এ রকম একটা মানুষকে মাদক মামলা দেওয়া হয়। তিনি নাকি মাদক সেবনকারী! একটা মানুষকে যতটা ভিকটিমাইজ করা যায় সেভাবে তাঁকে ভিকটিমাইজ করা হয়েছে।’
আইনজীবী বলেন, ‘বিজ্ঞ আদালত আপনি নিজেই তাঁকে চিকিৎসার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার লেখালেখির কারণে তাঁকে আবার হাসপাতাল থেকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁর কিডনি নষ্ট ও হার্ট নষ্ট। তাঁকে জামিন দিন।’
আইনজীবী আরো বলেন, ‘তিনি তো সাহেদ না, তিনি ছিলেন যুবলীগের নেতা। রাজনৈতিক কারণে সম্রাটকে আজ বলির পাঁঠা হতে হয়েছে। সম্রাট নির্দোষ, তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। যেকোনো শর্তে তাঁর জামিন চাচ্ছি।’
এরপরে শুনানি শেষে বিচারক সম্রাটের জামিন নাকচ করে দেন। এর আগে সকাল ১০টায় সম্রাটকে কারাগার থেকে ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়। এরপর তাঁকে আদালতের গারদখানায় রাখা হয়। সেখান থেকে সকাল ১১টা ২০ মিনিটে বিচারকের নির্দেশে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের কাঠগড়ায় হাজির করা হয়। এরপর ১১টা ২৫ মিনিটে শুনানি শুরু করেন।
মুক্তির দাবিতে সমর্থকদের বিক্ষোভ
এদিকে সকালে সম্রাটকে আদালতে আনা হলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ শুরু করে। তারা সকাল থেকেই সম্রাটের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেয়।
অভিযোগপত্র
গত বছরের ৬ নভেম্বর ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে অস্ত্র মামলায় অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১-এর উপপরিদর্শক শেখর চন্দ্র মল্লিক।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, সম্রাটের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি। লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র নিজ হেফাজতে ও নিয়ন্ত্রণে রাখায় তাঁর বিরুদ্ধে আনা অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
এ ছাড়া গত বছরের ৯ ডিসেম্বর রাজধানীর রমনা থানায় মাদক আইনে করা মামলায় সম্রাট ও এনামুল হক আরমানের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১-এর উপপরিদর্শক আবদুল হালিম।
সম্রাট গ্রেপ্তার
গত ৬ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার আলকরা ইউনিয়নের কুঞ্জশ্রীপুর গ্রামে স্টার লাইন পরিবহনের মুনীর হোসেন চৌধুরীর বাসা থেকে সম্রাট ও তাঁর সহযোগী এনামুল হক আরমানকে আটক করে র্যাব। পরে তাঁদের ঢাকায় নিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সম্রাটকে নিয়ে অভিযানে বের হয় র্যাব। রাজধানীর কাকরাইলে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টারে তালা ভেঙে তাঁর কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে অভিযান চালায় র্যাবের একটি দল। সেখানে অবৈধ পিস্তল, গুলি, ক্যাঙারুর দুটি চামড়া, ১৬ বোতল বিদেশি মদ, এক হাজার ১৬০ পিস ইয়াবা, নির্যাতন করার জন্য বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্রসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়। একই সময় সম্রাটের মহাখালী ও শান্তিনগরের ফ্ল্যাটে অভিযান চালায় র্যাব।
পরে কাকরাইলের নিজ কার্যালয়ে ক্যাঙারুর চামড়া রাখার দায়ে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে সম্রাটকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম এই আদেশ দেন। পরে সম্রাটকে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
এ ছাড়া মাতাল অবস্থায় গ্রেপ্তার হওয়ায় এনামুল হক আরমানকে ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। পরে তাঁকে কুমিল্লা কারাগারে পাঠানো হয়।