‘আর ভাঙা ঘরে থাকতে হবে না’, মৃত্যুর আগে ভাইকে বলেছিলেন আরিফ
ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে রাশিয়ার রকেট হামলায় বরগুনার বেতাগী উপজেলার বাসিন্দা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান আরিফের মৃত্যুতে পরিবারে চলছে আহাজারি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা, সংজ্ঞাহীন মা।
ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’তে রকেট হামলা চালায় রাশিয়া। এতে জাহাজে থাকা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. হাদিসুর রহমান আরিফ নিহত হন। তিনি ওই জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
জানা যায়, আরিফ চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমির ৪৭তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। লেখাপড়া শেষ করে তিনি এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজে থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি নেন।
ইউক্রেনে আটকে পড়ার পর থেকেই জাহাজটিতে থাকা সবার পরিবারের দিন কাটছিল দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে। তাদের সে শঙ্কাই সত্যি হলো। লাশ হলো সন্তান।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটিতে পাঁচ বছর ধরে চাকরি করছিলেন আরিফ।’
নিহত আরিফের ছোট ভাই মো. তারেক বলেন, “বুধবার সকালেও ভাই আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে সময়ে ফোনে বলেন, ‘ভাই, আমাদের আর ভাঙা ঘরে থাকতে হবে না। বাড়িতে এসেই যেভাবে হোক ঘরের কাজ ধরব।”
তারেক আরও জানান, ফোনালাপে ইউক্রেনে বোমা, গুলির শব্দ ও যুদ্ধের অবস্থা নিয়েও কথা হয়। ভীতিকর পরিস্থিতি নিয়ে আরিফ শঙ্কায় ছিলেন। বাড়ি ফেরার তাড়া যে রয়েছে, তা আরিফের কথায় বোঝা যাচ্ছিল। বাড়ি ফিরে কী কী কাজ করবেন, ছোট ভাইয়ের সঙ্গে তা নিয়েও আলোচনা করেন।
তারেক বলেন, ‘আমরা জাহাজে থাকা আরিফের সহকর্মীদের কাছেই মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হয়েছি। এরপর থেকে আমার বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছেন, মা বেহুঁশ।’
সরকারের কাছে তারেক অনুরোধ করেন, যাতে দ্রুত তাঁর ভাইয়ের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনা হয়।
সিরামিকের কাঁচামাল ‘ক্লে’ পরিবহণের জন্য জাহাজটি তুরস্ক থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরের জলসীমায় পৌঁছায়। তবে যুদ্ধাবস্থা এড়াতে জাহাজটিকে সেখানে পৌঁছানোর পরই পণ্য বোঝাই না করে দ্রুত ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা দেন শিপিং করপোরেশনের কর্মকর্তারা। শেষ মুহূর্তে বন্দরের পাইলট না পাওয়ায় ইউক্রেনের জলসীমা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি বাংলাদেশের এ জাহাজটি।