আ.লীগের নতুন জেলা কমিটিতে বাদপড়া নেতাদের সংবাদ সম্মেলন
রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের ঘোষিত কমিটিতে পদহারানো বিগত কমিটির কয়েক নেতা এক সংবাদ সম্মেলনে নবনির্বাচিত কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক হাজি মুছা মাতব্বরের বিরুদ্ধে ‘ব্যক্তিস্বার্থ’ ও ‘সিন্ডিকেট রাজনীতি’র অভিযোগ এনে, কমিটিতে তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করার জোর দাবি জানিয়েছেন।
আজ সোমবার (২৭ মার্চ) দুপুরে রাঙামাটির একটি রেস্টুরেন্টে এক সংবাদ সম্মেলনে বাদপড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিগত কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আব্দুল মতিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জমিরউদ্দিন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ, স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা, জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা, জাকির হোসেন সেলিম, মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, অমর কুমার দে, আজম চৌধুরী এই দাবি জানান।
এ সময় তাঁদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন এক সময়কার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশুতোষ বড়ুয়াও।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আব্দুল মতিন। তিনি অভিযোগ করেন, সর্বশেষ জেলা কাউন্সিলে নিখিল কুমার চাকমার পক্ষে কাজ করায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও নিজেদের ক্ষমতা সুসংহত রাখতে দীপংকর ও মুছা ‘ব্যক্তিস্বার্থে’ ত্যাগী-পরীক্ষিত-প্রবীণ ১৬ নেতাকে নতুন ঘোষিত ৭৫ সদস্যের কমিটিতে স্থান দেননি।
আব্দুল মতিন অভিযোগ করেন, কাউন্সিলে যে আশ্বাসের ভিত্তিতে নিখিল কুমার চাকমা নিজেকে সভাপতি পদ থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন, সেই মোতাবেক দুই পক্ষই আলোচনার মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার কথা। কিন্তু এই কমিটি গঠন করার সময় নিখিল-কামালের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করা হয়নি।
আব্দুল মতিন নতুন ঘোষিত কমিটি সংশোধন বা রদবদল করে ত্যাগীদের সম্পৃক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগ এক ও অভিন্ন। আমাদের কোনো গ্রুপিং নেই। কাউন্সিলে নিখিল সভাপতি হলে তার পক্ষে থাকতাম হয়তো, দীপংকর নির্বাচিত হওয়ায় আমরা তার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয় নতুন কমিটি থেকে আমরা বাদ পড়ে গেলাম!’ এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মতিন বলেন, ‘দীপংকর তালুকদারের কোনো বিকল্প নেই, এটা ঠিক নয়। তাঁর বিকল্প অবশ্যই আছে।’ এ সময় তিনি ‘আওয়ামী লীগে গণতন্ত্র আছে’ বলেও মন্তব্য করেন।
বাদপড়া সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সভাপতি-সেক্রেটারির সিন্ডিকেট রাজনীতির রোষানলে পড়েছি আমরা। আমি মনে করি আমাদের বাদ দেওয়া হয়নি, বহিষ্কার করা হয়েছে। আমরা তাদের প্রতিহিংসার রাজনীতির শিকার। দীপংকর-মুছার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট রাজনীতির অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, আমি আওয়ামী লীগের বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা যুবলীগে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও ঠিকমত সাংগঠনিক কাজকর্ম যথাযথভাবে করতে পারিনি। কারণ আমাকে দাবায়ে রাখা হতো, নিজস্ব মতামতের গুরুত্ব ছিল না। শুধু দীপংকর তালুকদারের নির্দেশে চলতে হতো। আমরা মনে করি, এভাবে চলতে দেওয়া যায় না, এটা হতে পারে না।’
বাদ পড়া সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক স্মৃতি বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, ‘কাউন্সিলে তিনি ( দীপংকর) ঘোষণা দিয়েছিলেন, অসুস্থ-মৃত ও অক্ষম ছাড়া কমিটিতে যারা আছেন, তাদের সবাইকে নিজ নিজ পদে বহাল রেখে কমিটি ঘোষণা করা হবে। আমরা তাই বিশ্বাস করেছিলাম তাঁর উপর, তিনি কথা দিয়ে কথা রাখেননি।’
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বাদ পড়া ১৬ জন ও আশুতোষ বড়ুয়ার নাম ও পদবি উল্লেখ করা হলেও তাতে স্বাক্ষর ছিল নয় জনের। বাকিরা নানা কারণে উপস্থিত থাকতে পারেননি এবং স্বাক্ষর করতে পারেননি বলে জানিয়েছেন সংবাদ সম্মেলন করা আওয়ামী লীগনেতারা। তবে ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া একই গ্রুপের অনুসারি নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি এই সংবাদ সম্মেলনে।
প্রসঙ্গত, জেলা সম্মেলনের ১০ মাস পর গত ২১ মার্চ রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। যাতে ১০ বছর আগের কমিটির ১৬ জন নেতা বাদ পড়েন।
বাদপড়া নেতাদের সংবাদ সম্মেলন প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি মো. মুছা মাতব্বর বলেন, ‘দলীয় কর্মকাণ্ডে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় নন, এমন নেতাদেরই বাদ দেওয়া হয়েছে। যারা সংবাদ সম্মেলন করেছে, তারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রকে জানাব এবং দলকে বিভক্ত করার অপচেষ্টার বিষয়টি সম্পর্কেও অবহিত করব।’
সংবাদ সম্মেলনে ‘দীপংকর-মুছা সিন্ডিকেট রাজনীতি’র যে অভিযোগ, সেই প্রসঙ্গে হাজি মো. মুছা মাতব্বর বলেন, ‘নিজেদের নিষ্ক্রিয়তায় কমিটি থেকে বাদ পড়ে এসব বলছেন তাঁরা।’