ঈদের ভরা মৌসুমে ক্রেতাশূন্য বাবুরহাট, শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা
বৈশ্বিক অর্থনীতির মন্দার প্রভাব পড়েছে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর শেকেরচর বাবুরহাটে। গ্যাস বিদ্যুৎ, রং ও সুতার দাম বৃদ্ধিতে বেড়েছে কাপড়ের দামও । তাই বেচাকেনায় ভাটা পড়েছে। পাইকারি বিক্রেতারা ঈদ উপলক্ষে নিত্য নতুন বাহারি ডিজাইনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসলেও আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। তাই হতাশ হাটের ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানাবিধ কারণে কাপড় কেনায় মানুষের আগ্রহ কমেছে। ফলে পাইকারি ক্রেতারা তুলনা মূলক কম কাপড় কিনছে। এ সব কারণে বাবুর হাটের সাপ্তাহিক লেনদেন কমেছে কোটি কোটি টাকা।
ব্যবসায়িক নেতারা বলছেন, প্রতি সপ্তাহে হাটে দুই থেকে আড়াইশ কোটি টাকার লেনদেন হচ্ছে।
নরসিংদী সদর উপজেলার শীলমান্দি ইউনিয়নে অবস্থিত প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার খ্যাত শেখেরচর দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাট। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলার কাপড় ব্যবসায়ীরাদের যাতায়াত। এই হাটে কমবেশি প্রায় পাঁচ হাজার দোকান রয়েছে। ৭৯ বছর ধরে চলা এই হাট প্রথমে ছিল এক দিনের। বর্তমানে সপ্তাহে বৃহস্পতি থেকে শনিবার তিন দিন বসে হাট। দেশের নিত্যব্যবহার্য কাপড়ের চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ পূরণ করছে এই হাট। তাঁতসমৃদ্ধ নরসিংদী ও এর আশপাশের বিভিন্ন জেলার উৎপাদিত কাপড় ও কাপড়জাত পণ্য বিক্রি হয় এই হাটে। রুমাল থেকে জামদানি পর্যন্ত সব কাপর পাওয়া যায় এক হাটে। তাই দেশের প্রায় সব জেলার কাপড় ব্যবসায়ীরা পাইকারি কাপড় কিনতে এই হাটে আসেন।
ঈদ উপলক্ষে কাপড় কিনতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতাদের পদচারণায় সরগরম বাবুরহাট। শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিস, শার্ট-প্যান্ট , ব্যাডশিট, থান কাপড়, গজ কাপড় বিক্রি হয় এই হাটে। ঈদ উপলক্ষে নিত্য নতুন ডিজাইনের শাড়ি, লুঙ্গি ও থ্রি-পিসসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানিরা। তবে কাপড়ের দাম বৃদ্ধির ফলে পাইকাররা কম কাপড় কিনছে। তবে কিছু কিছু দোকানে ভিন্ন চিত্রও দেখা গেছে।
বিদেশের বাজারে লুঙ্গি রপ্তানিকারক আমানত শাহ গ্রুপের দোকানে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। ক্রেতায় সরগরম দোকান। তাদের দোকানের কর্মচারীরা দম ফেলার ফুসরত পাচ্ছেন না।
কাপড় ব্যবসায়ী রঞ্জিত সাহা বলেন, প্রতিটা কাপড়ের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই এ বছর ঈদের বেচাকেনা খুবই খারাপ। গত ১০ থেকে ১৫ বছরে ঈদের মার্কেটে এত খারাপ বেচাকেনা হয়নি। গ্যাস, বিদ্যুৎ, রং ও সুতার দাম বৃদ্ধিতে ড্রাইং প্রিন্টিংয়ের খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়। এতে হাটের প্রতি পিস শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি-পিসে ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। থান কাপড়ে প্রতি গজে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। যার কারণে এখন কাপড়ের বাজারের ক্রেতার সংখ্যা খুবই কম।
থ্রি-পিস ব্যবসায়ী সুমন বলেন, বাবুরহাটের ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে। এ যাবৎকালে আরও যত ঈদের বেচাকেনা হয়েছে,তার মধ্যে এ বছর সর্বনিম্ন পর্যায়ের বেচাকেনা হয়েছে। যেটা বাবুরহাটের জন্য এবং তৎ-সংলগ্ন শিল্পাঞ্চলের জন্য অত্যন্ত অশিনি সংকেত বহন করে।
বেচাকেনা কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে থ্রি-পিস ব্যবসায়ী সুমন বলেন, খুচরা পর্যায়ে বেচাকেনা না হওয়া পাইকারি ক্রেতারা কম কাপড় কিনছে।
লুঙ্গি ব্যবসায়ী সত্যরঞ্জন দাস বলেন, ঈদ উপলক্ষে এ বছর অর্ধশতাধিক নতুন ডিজাইনের লুঙ্গি বাজারে এসেছে। ৮০ ভাগ বিক্রি হয়েছে। ২০ ভাগ রয়ে গেছে। আশা করছি ঈদের আগে সেগুলোও বিক্রি হবে।
বিদেশের বাজারে রপ্তানিকারক আমানত শাহ গ্রুপের চেয়ারম্যান হেলাল মিয়া বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত লুঙ্গি দুবাই, সৌদি আরব, ভারতসহ মিড-ইস্টের বিভিন্ন দেশেরপ্তানি হচ্ছে। এ বছর লুঙ্গির সঙ্গে টুপি, তজবি ও আতর দেওয়া হচ্ছে। ৮০ টাকা থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার লুঙ্গি পাওয়া যায় আমাদের দোকানে।’
পাইকারি ক্রেতা মোসাম্মত ফরিদা খাতুন বলেন, ‘গাজীপুরে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। আমি সব সময় বাবুরহাট থেকে পাইকারি কাপড় কিনি। এর কারণ এক হাটেই সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায়। দামও তুলনামূলক কম।’
বাবুরহাট বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান জানান, এবারের রমজানজুড়ে প্রতি হাটে গড়ে লেনদেন হচ্ছে আড়াইশ কোটি টাকা। এবার বাবুরহাটে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার লেনদেনের আশা করছেন বণিক সমিতির এই নেতা।
বাবুরহাট বাজার বণিক সমিতি সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন জানান, এবার ক্রেতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে হাটকে সিসি টিভির আওতায় আনা হয়েছে।