ওমরের দাবি তিন ডোজ, বিএসএমএমইউ বলছে একটি
নারায়ণগঞ্জের ওমর ফারুক দাবি করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) টিকা নিতে গেলে তাঁকে তিন ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে হাসপাতালের পরিচালক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান বলছেন, ‘আমরা তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছি; তাঁকে এক ডোজই টিকা নেওয়া হয়েছে।’
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ভূঁইগড় এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক গত সোমবার বিএসএমএমইউতে করোনাভাইরাসের টিকা নিতে এসেছিলেন। টিকা গ্রহণ শেষে তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের কাছে দাবি করেছিলেন, তাঁকে পরপর তিন ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। পরে ওই সংবাদের একটি ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তখন নানা মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, কীভাবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ কাজ করে।
ওমর ফারুকের পরিবারের দাবি, বিএসএমএমইউর কথা বলে গতকাল বুধবার দুপুরে তাঁকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় লোকজন।
ওমর ফারুকের বোন ফারজানা আক্তারের দাবি, ‘ভাইকে দুটি গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর তাঁর ফোন বন্ধ হয়ে যায়। পরে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই। যদিও পরে হাসপাতাল থেকে আমাদের জানানো হয়, ভাইয়াকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তবে তাঁকে নিয়ে যাওয়া নিয়ে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই। আমার ভাই ভালো থাকলেই আমরা খুশি।’
এসব ব্যাপারে জানতে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান এই প্রতিবেদকের কাছে দাবি করেছেন, ‘আমি আর ভিসি স্যার সকালে ওমর ফারুককে দেখতে গিয়েছিলাম। আমাদের সামনেও ওমর ফারুক বলেছেন, তাঁর বাঁ হাতে তিন ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ ঘটনা সত্য নয়। তাঁকে এক ডোজ টিকাই দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তে নিশ্চিত হয়েছি কোনোভাবেই তাঁকে তিন ডোজ টিকা দেওয়া হয়নি। আপনাকে তিন ডোজ দিলে আপনি নিবেন? উনারই তো বলার কথা, আমার একবার দেওয়া হয়ে গেছে।’
ডা. মো. নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘র্যাব গতকাল আমাদের কাছে ওমর ফারুককে দিয়ে গেছে। তারপর থেকে তিনি আমাদের হাসপাতালে আছেন। পর্যবেক্ষণে আছেন এবং ভালো আছেন। এ ব্যাপারে আমরা বিস্তারিত তদন্ত করছি। কারণ, একই ব্যক্তিকে এক দিনে তিন ডোজ টিকা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নেই কারণ, এটা ডকুমেন্টেড বিষয়। এক বুথ থেকে আরেক বুথে গেলেও আপনাকে দুই ডোজ দেওয়া হবে না। সেখানে তিন ডোজ তো অনেক পরের বিষয়।’
‘এক ডোজ টিকা নিলে শরীরে জ্বর আসে। সেখানে তিন ডোজ টিকা দেওয়া হলে তাঁর (ওমর ফারুক) অনেক সমস্যা হওয়ার কথা। কিন্তু তিনি পুরোপুরি সুস্থ আছেন। আবার তাঁর দাবি, বাঁ হাতে তিনবার সুচ ঢোকানো হয়েছে। কিন্তু তিনবার সুচ ঢোকানোর কোনো প্রমাণও তাঁর হাতে পাওয়া যাচ্ছে না। সেজন্য তিন ডোজ দেওয়া হয়েছে, কি হয়নি তা তদন্ত কমিটি আরও যাচাই করবে। ওমর ফারুকের কোনো মানসিক সমস্যা আছে কিনা, তাও যাচাই করে দেখা হচ্ছে’, যোগ করে বিএসএমএমইউর পরিচালক।
এদিকে বিএসএমএমইউর ভাইরোলজি বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই প্রতিবেদককে বলেছেন, ‘আমার যতটুকু ধারণা, একের অধিক ডোজ কারো শরীরে পুশ করা হলে তার ক্ষতি বা কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেওয়ার কথা। হয়তো এমনও হতে পারে, আমাদের চেয়ে ওই ব্যক্তির শরীরে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হতে পারে।’
ওমর ফারুকের প্রতিবেশীরা বলছে, ওমর ফারুকের পরিবার অনেক গরিব। তাঁর যদি কিছু হয় এই দায় হাসপাতালের। কারণ, একজন সাধারণ মানুষ হাসপাতালে গেল আর তিন ডোজ টিকা দিয়ে দিবেন? এটা অন্যায় কাজ বলেও স্থানীয়দের দাবি। ওমর ফারুকের যদি কোনো ক্ষতি হয় তাহলে পরিবারকে বড় অঙ্কের টাকা দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
সৌদি আরবে যেতে গত ২৬ জুলাই সকালে বিএসএমএমইউতে টিকা নিতে যান ওমর ফারুক। টিকা নেওয়া শেষে ওমর ফারুক দাবি করেছিলেন, সেখানে প্রথমে একটি টিকার এক ডোজ দেওয়া হয়। পরে ওমর ফারুক ওই বুথের স্বাস্থ্য কর্মীদের কাছে জানতে চান, এখন তিনি কী করবেন? তখন তাঁকে পরের বুথে যেতে বলেন তাঁরা। পরের বুথে গেলে তাঁকে আবার টিকা দেওয়া হয়। এরপর ওমর ফারুককে দ্বিতীয় বুথ থেকে তৃতীয় বুথে পাঠানো হলে সেখানেও আবার টিকা দেওয়া হয়। এরপর তিনি নারায়ণগঞ্জের নিজ বাড়িতে ফিরে যান।
ওমর ফারুক নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ভূঁইগড় এলাকার জামাল হোসেন প্রধানের ছেলে। তাঁর চার বছর বয়সী এক ছেলে আছে। ওমর ফারুক তাঁর চাচা আলাউদ্দিনের তিন তলা বাড়ির নিচ তলায় ভাড়া থাকেন। চার বছর আগে ওমর ফারুক ভূঁইগড় মিছির আলী মাদ্রাসা থেকে হেফজ বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। এরপর থেকে তিনি বেকার ছিলেন। সম্প্রতি তাঁর সৌদি আরবে যাওয়ার ভিসা হয়। সেজন্য তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে রাজধানীর বিএসএমএমইউতে টিকা নিতে এসেছিলেন। কারণ, বিদেশগামীদের ঢাকার হাসপাতালগুলো থেকে টিকা নিতে হয়।