ওসিকে এক টাকা জরিমানা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে না আসায় পাবনার আমিনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রওশন আলীকে এক টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জিয়াউর রহমান এই জরিমানা করেন। বিচারক রায়ে বলেন, থানা পুলিশ অপরাধমূলক ঘটনা তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীকে বিচারে সোপর্দ করে। কোর্টে বিচার হয় সাক্ষ্যর ভিত্তিতে। আদালতে সাক্ষ্য উপস্থাপনের দায়িত্ব পুলিশের। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য প্রদান সাক্ষীর আইনগত দায়িত্ব। সাক্ষী প্রদানের জন্য আদালতের সমন বা প্রসেসকে ইচ্ছাপূর্বক অবহেলা বা প্রত্যাখ্যান ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৮৫ (এ) ধারা মতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
রায়ে বিচারক আরও বলেন, বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তি হাতের মুঠোয়। সাক্ষীর প্রসেস পায়নি কোন কোন সাক্ষী এমন দাবি করে কোর্টে সাক্ষী দিতে আসতে বিলম্ব করে। যার ফলে মামলা নিষ্পত্তিতে বিলম্ব হয়, বিচারপ্রার্থীদের হয়রানি বাড়ে। এ ক্ষেত্রে সাক্ষীর প্রসেস দ্রুত প্রাপ্ত নিশ্চিত করতে একটি কার্যকর অ্যাপস উদ্ধাবন করা যেতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ মামলায় দ্রুত সাক্ষী উপস্থাপনে প্রতিটি জেলায় পুলিশের সাক্ষী সহায়ক সেল থাকতে পারে।
বিচারক রায়ে আরও বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৮৫(এ) ধারার প্রসিডিং গ্রহণের পর এই সাক্ষী আদালতে উপস্থিত রয়েছে এবং আগের মতই প্রথাগত দাবি-প্রসেস পাননি মর্মে উল্লেখ করেছেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। প্রসেস না পাওয়া সংক্রান্ত তার এই দাবি সত্য নয়। সর্বশেষ মূল প্রসেস প্রেরণের পাশাপাশি তাকে তার মোবাইল নম্বরে অনলাইনে সাক্ষীর প্রসেসের কপি প্রেরণ করা হয়েছে। আদালতে সমন প্রসেস রেজিস্টার সংরক্ষিত আছে। এই সাক্ষী আদালতের ক্ষমার সুযোগকে অপব্যবহার করেছে। সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়, এই মামলায় সাক্ষীর লিখিত ব্যাখ্যায় আদালতে ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৮৫(এ) ধারার প্রসেডিং হতে বাঁচার কৌশল, সাক্ষীর অনুতপ্ত হৃদয় হতে নয়।
রায়ে বিচারক আরও বলেন, মামলার নথি, প্রসেস রেজিস্টার, সাক্ষীর লিখিত ও মৌখিক বক্তব্যসহ সমস্ত বিষয় পর্যালোচনান্তে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৮৫(এ) ধারার প্রসিডিং এ সাক্ষী মো. রওশন আলীকে দোষী সাব্যস্ত করা হলো এবং আদালতের উদারতা ও ন্যায় বিচারের স্বার্থে উক্ত অপরাধে তাতে এক টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে কোর্ট সময় পর্যন্ত কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।
এই রায়ে পরে পুলিশের পরিদর্শক রওশন আলী জরিমানার এক টাকা পরিশোধ করেন। পরে আদালতের পেশকার হেমন্ত বর্মণ সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে জরিমানার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেন।
এ বিষয়ে ওসি রওশন আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘মামলা নথিজাত হয়ে গেছে। এটুকুই জানি। আর কিছু জানি না।’
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি(পিপি) ইসমত আরা বলেন, রওশন আলী আগে পাবনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালে ৬ আগস্ট নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নিয়ে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে এক যুবককে আটক করে একটি মামলা করেন তিনি। এই মামলায় অন্য সব সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন আদালত। তবে সহযোগী সাক্ষী হিসেবে রওশন আলীকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য পরপর ছয়বার সমন পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি আদালতে আসেননি। পরে আদালত রওশন আলীর মোবাইলের হোয়াটস অ্যাপে আদালতের সমনের ছবি পাঠান। এতেও কোনো উত্তর না দিয়ে ওসি সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।
পিপি আরও বলেন, উনি সাক্ষ্য না দেওয়ার ফলে মামলার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাই গত চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ওসিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠান আদালত। নোটিশে কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা জানতে চান আদালত।
এরপর মামলার নির্ধারিত দিনে মঙ্গলবার হাজির হন ওসি। এ সময় তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। তবে আগেও সমন অবজ্ঞা করার রেকর্ড থাকায় এবং তার মধ্যে কোনো অনুশোচনা না থাকায় আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে ওসিকে জরিমানা করেন।