ওয়াজেদ মিয়া কখনো কোনো অন্যায় সুবিধা নেননি : বঙ্গবন্ধু পরিষদ
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিম্পন্ন পরমাণুবিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার আজ মঙ্গলবার (৯ মে) ১৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর এ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সোমবার এক যুক্ত বিবৃতি দিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
যুক্ত বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেছেন, স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া কখনও কোনো তদবির করেননি বা কোনো ব্যক্তিগত সুবিধা নেননি।
যুক্ত বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘১৯৬৭ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জেলে রাজবন্দি থাকা অবস্থায় তাঁর জ্যেষ্ঠকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন হওয়া সত্ত্বেও এই মহান বিজ্ঞানী তাঁর স্ত্রীর রাজনীতি ও সরকার পরিচালনায় কখনও প্রভাব বিস্তার করেননি। স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও তিনি কখনো কোনো তদবির করেননি বা কোনো ব্যক্তিগত সুবিধা নেননি। এমনকি পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে স্বাভাবিক দায়িত্বকাল শেষ হওয়ার পর অনেকের অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি সেই মেয়াদকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বর্ধিত করারও চেষ্টা করেননি। প্রধানমন্ত্রীও নিজের স্বামীকে এমন সুবিধা দেওয়ার কোনো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ চেষ্টা করেননি। বাংলাদেশের ইতিহাসে যা এক বিরল ঘটনা।’
বিবৃতিতে নেতারা বলেন, বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী এই বিজ্ঞানী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯৬২ সালে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রের পাশাপাশি রাজনীতি সচেতনও ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের পক্ষ হয়ে ১৯৬১-৬২ শিক্ষাবর্ষে ফজলুল হক হল ছাত্র সংসদের নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৬২ সালের কুখ্যাত শিক্ষা কমিশন রিপোর্ট-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন।
দেশে ও বিদেশের বৈজ্ঞানিক জার্নালগুলোতে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার প্রকাশিত অনেক গবেষণাপত্র বিজ্ঞানীমহলে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, সারা জীবন তিনি বিজ্ঞানের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের গবেষকদের জন্য পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণাসূত্রে লিখিত তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত বই রয়েছে। বাংলাদেশ একদিন পরমাণু শক্তিকে জনগণের কল্যাণে সুচারুভাবে ব্যবহার করবে তিনি তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ স্বপ্ন দেখেছেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পের বিষয়ে তিনি অত্যন্ত উৎসাহী ও আশাবাদী ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু পরিষদ গবেষণায় নিবেদিতপ্রাণ মহান ও নীতিনিষ্ঠ এই বিজ্ঞানীর প্রতি পরম শ্রদ্ধা নিবেদন ও তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছে।
বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের অধিকারী বরেণ্য এই পরমাণু বিজ্ঞানী ১৯৪২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার লালদীঘি ফতেহপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৭ বছর বয়সে তিনি ২০০৯ সালের ৯ মে রাজধানী ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর পর শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী মরদেহ পীরগঞ্জ উপজেলার ফতেহপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মা-বাবার কবরের পাশে দাফন করা হয়।