করোনার টিকা নিয়েও লুটপাটের আয়োজন : মির্জা ফখরুল
করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে সরকারি মদদপুষ্ট ব্যবসায়ীরা লুটপাটের আয়োজন করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজকে একদিকে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করা হয়েছে, অর্থনীতি লুটপাট করা হয়েছে, একটা লুটপাটের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
আজ সোমবার বিকেলে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত সরকারের ক্ষমতা দখলের দিনটিকে ‘কালো দিবস’ দিবস হিসেবে পালনে বিএনপির উদ্যোগে ‘এক এগারো : বিরাজনীতিকরণের ধারাবাহিকতায় চলমান ফ্যাসিবাদ, গণতন্ত্রই মুক্তির পথ’ শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই চরম দুর্দিনে কোভিড ভাইরাস যখন আমাদের গোটা বিশ্বের ব্যবস্থাকে পাল্টে দিচ্ছে, তখন আমরা অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে দেখছি যে, সরকারি মদদপুষ্ট যারা ব্যবসায়ী, তারা আজকে ভ্যাকসিন নিয়েও একটা লুটপাটের আয়োজন করছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা এই বাংলাদেশের লুটপাটের যে অর্থনীতি এটাকে পরিবর্তন করতে চাই। আমরা বাংলাদেশের একদলীয় শাসনব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে এখানে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা এখানে সত্যিকার অর্থেই সাধারণ মানুষের অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের নিশ্চয়তা দিতে চাই। আমরা এখানে সত্যিকার অর্থেই মানুষের বাকস্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা দেখতে চাই যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের যে স্বপ্ন ছিল যে, এখানে একটা সত্যিকার অর্থেই একটা কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠন করা হবে সেই কল্যাণমূলক রাষ্ট্র আমরা গঠন করতে চাই। আমরা দেখতে চাই, আমাদের নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের সব গণতন্ত্রকামী মানুষ তারা ঐক্যবদ্ধ হবেন এবং সত্যিকার অর্থেই গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে পরাজিত করতে বাধ্য করবে।
১/১১ এর ঘটনার কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বক্তব্যে তুলে ধরে বলতে চাই, ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসের ১১ তারিখে যে অভ্যুত্থান-এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার ছিল না। এটা ছিল বাংলাদেশের সত্যিকার অর্থেই দেশপ্রেমিক, গণতান্ত্রিক শক্তিকে নির্মূল করার জন্যেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের একটি অংশ। আমরা খুব স্পষ্টভাবে দেখেছি পরবর্তী ধারাবাহিকতায় যারা সেদিন অভ্যুত্থান ঘটিয়েছিল একটি গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করে, সাংবিধানিক সরকারকে উৎখাত করে। তারাই পরবর্তীকালে তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে আজকে যাদের ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে এরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে, গণতন্ত্রকে ইতিমধ্যে তারা প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, যে স্বপ্ন যে একটা সত্যিকার অর্থে একটা বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, একটি উন্নয়ন-উন্নত আধুনিক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করা- সেই স্বপ্নকে সম্পূর্ণভাবে ধবংস করে দিচ্ছে আজকের সরকার আওয়ামী লীগ।
বিএনপির এ নেতা বলেন, আমরা সবাই জানি যে, তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ সালে যখন নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে সেই শক্তির মদদপুষ্ট হয়েই আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৪ সালে সম্পূর্ণভাবে ভোটারবিহীন বিনা ভোটের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসা হয়। আমরা এটাও জানি যে, ২০১৮ সালে একই কায়দায় আগের রাতেই জনগণের ভোটের অধিকারকে চুরি করে, হরণ করে নিয়ে গিয়ে আবার একটি সেই অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় বসানো হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই একটা চেষ্টা হয়েছে সবসময় একটা বিশেষ মহল থেকে যে, বাংলাদেশকে নিজের করায়ত্ব করে রাখা। সেটা দেশি-বিদেশি চক্রের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের আত্মা হচ্ছে গণতন্ত্র। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে সেই গণতন্ত্রকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে। তারই ফলশ্রুতিতে আমরা দেখেছি যে, ১/১১ সংঘটিত হয়েছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় আজকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে দিয়ে, অধিকারগুলোকে হরণ করে আজকে একটি দলীয় সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হচ্ছে। আজকে যে বাংলাদেশ এই বাংলাদেশ মানুষ কখনো চায়নি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ১/১১ সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। দুই বছর থেকে ওরা হাতে ধরে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিয়ে গেছে। তার ধারাবাহিকতায় আজকে পর্যন্ত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। তারা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছে, সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে।
সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, আজকে বাংলাদেশের মানুষ এই সরকারের প্রতি অতীষ্ঠ, বিক্ষুব্ধ। এই সরকারের হাত থেকে জনগণ মুক্তি চায়। এদেশের জনগণ গণতন্ত্র ফিরে পেতে চায়, এদেশের জনগণ ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। এদেশের জনগণ নিরাপদভাবে বসবাস করতে চায়। সেই অবস্থায় যদি দেশকে আবার ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হলে মাদার অব ডেমোক্রেসি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে পূর্ণাঙ্গ মুক্ত করতে হবে। এজন্য এই স্বৈরাচারী সরকারকে হটানো ছাড়া সম্ভব নয়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ২০০৭ সালের ১/১১ হলো একটা কালো দিবস, একটা অভিশপ্ত দিবস। এটা শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক মানুষের মুখে চুনকালি দেওয়া হয়েছে যারা গণতন্ত্র ভালোবাসে।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিরাজনীতিকরণে আজকে তারা যে সুযোগটা নিচ্ছে তার একটাই কারণ হলো প্রতিবেশী দেশ ভারতের একটা অঙ্গরাজ্যে দেশটাকে পরিণত করা। ইতোমধ্যে ইনডাইরেক্টলি হয়েই গেছে। এখন শুধু স্বীকৃতির অপেক্ষা। এখন যাতে বিএনপি কিংবা কোনো রাজনৈতিক দল দাঁড়াতে না পারে এজন্য তারা তাদের কাজ-কর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এক-এগারোর যে তাণ্ডব, বিরাজনীতিকরণের যে তাণ্ডব তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছেন আমাদের দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ তাঁর পরিবার।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ১/১১‘র ওরা চেষ্টা করছে নানাভাবে ম্যাডামকে রাজি করাতে। কিন্তু ম্যাডাম কোনো অবস্থাতেই সংবিধানের বাইরে অথবা গণতন্ত্রের প্রশ্নে মাথা নত করেন নাই। সে কারণে আজকে দুর্ভোগ, আজকে তিনি গৃহবন্দি। ১/১১-এর মতো যেন আগামীতে দলের মধ্যে ‘দ্বিধা-বিভক্তি’ যাতে না হয় সেজন্য সব নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন গয়েশ্বর।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি পরিচালনায় আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সেলিমা রহমান বক্তব্য দেন।