করোনার সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে ডেঙ্গু, আরও ১০৫ জন হাসপাতালে
চলতি বর্ষায় করোনাভাইরাসের মতোই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও প্রতিদিন বাড়ছে। গত দুদিন ধরেই ১০০ জনের উপরে রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে হুঁশিয়ার করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সর্দি-জ্বর নিয়ে করোনার পাশাপাশি যেন ডেঙ্গুর পরীক্ষাও করা হয়। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্যও আলাদাভাবে হাসপাতালের ব্যবস্থা করার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
আজ রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের নিয়মিত ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু রোগে আরও ১০৫ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১০২ জন এবং ঢাকার বাইরে নতুন তিনজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সব মিলিয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ভর্তি রোগী ৪৬০ জন। এর মধ্যে ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ৪৫৪ জন এবং অন্যান্য বিভাগে বর্তমানে মোট ভর্তি রোগী ছয়জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে আরও বলা হয়েছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট এক হাজার ৬৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে একই সময়ে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়প্রাপ্ত হয়েছেন এক হাজার ২১৬ জন।
আর চলতি জুলাই মাসের ২১ তারিখ পর্যন্ত ৯৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এরপর ২২ জুলাই ২৫ জন, ২৩ জুলাই ৮৫ জন এবং গতকাল ২৪ জুলাই ১০৪ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এদিকে আজ দুপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে করোনা ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন।
এ সময় ডেঙ্গু রোগীর বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে চলছে। একদিকে করোনা ও নন-করোনা রোগীর চিকিৎসা অন্যদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য পৃথক কয়েকটি হাসপাতাল প্রস্তুত করা হচ্ছে বলেও জানান জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এর মধ্যে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল, মিরপুরের লালকুঠি হাসপাতাল, সরকারি রেলওয়ে হাসপাতাল, টঙ্গীর আহসানউল্লাহ হাসপাতালসহ কয়েকটি হাসপাতালে শুধু ডেঙ্গুর চিকিৎসা হবে।
এর আগে গত ২১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেছিলেন, করোনাকালীন বাংলাদেশে অকালীন বর্ষা শুরু হয়েছে। এই বর্ষকাল আমাদের জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নাজমুল ইসলাম আরও বলেন, আমরা করোনা মহামারির মধ্যে রয়েছি। এই সময় জ্বর হওয়া মানেই যে সেটি করোনা হয়েছে বিষয়টি তা নয়। ডেঙ্গুর সন্দেহের বিষয়টিও ভাবতে হবে। পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর
ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা এবং এই ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপটাই নামক মশার কামড়ে। স্বল্প ক্ষেত্রে অসুখটি প্রাণঘাতী ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে পরিণত হয়। যার ফলে রক্তপাত, রক্ত অনুচক্রিকার কম মাত্রা এবং রক্ত প্লাজমার নিঃসরণ অথবা ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রূপ নেয়। যেখানে রক্তচাপ বিপজ্জনক মাত্রায় কম থাকে।
ডেঙ্গু ছড়ায় এডিস মশার কারণে। ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয় দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। এবার এ আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো জীবাণুবিহীন এডিস মশা কামড়ালে সেই মশাটিও ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। এভাবে একজন থেকে অন্যজনে মশার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়িয়ে থাকে।
ডেঙ্গুতে সাধারণত তীব্র জ্বর এবং সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। জ্বর ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়। শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়। এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়। গায়ে রেশ হতে পারে। এর সঙ্গে বমি বমি ভাব হতে পারে।
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ
ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হল এডিস মশার বিস্তার রোধ এবং এই মশা যেন কামড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থা করা। বাড়ির আশপাশের ঝোপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে, তাই ফুলদানি, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে। ব্যবহৃত জিনিস যেমন মুখ খোলা পানির ট্যাংক, ফুলের টব ইত্যাদিতে যেন পানি জমে না থাকে, সে ব্যবস্থা করতে হবে।
এডিস মশা সাধারণত সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য সময়ও কামড়াতে পারে। তাই দিনে ঘরের চারদিকে দরজা জানালায় নেট লাগাতে হবে। দিনে ঘুমালে মশারি টাঙিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।