কলেজছাত্রীর মৃত্যুকে ‘হত্যাকাণ্ড’ দাবি করে সহপাঠীদের মানববন্ধন
পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে কলেজছাত্রী পূর্ণিমা চাকমার রহস্যজনক মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে ঘটনার বিচার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে সহপাঠী ও স্বজনরা। আজ সোমবার সকাল ১০টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের ফটকের সামনে দেড় ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানায় পূর্ণিমার সহপাঠী, আত্মীয়স্বজন ও সাধারণ মানুষ।
কর্মসূচিতে পূর্ণিমা চাকমার মামাতো ভাই পলাশ চাকমা, জুরাছড়ি উপজেলার ৪ নম্বর দুমদুম্যা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান রাজেয়ে চাকমা, জুরাছড়ি উপজেলার বাসিন্দা মহারঞ্জন চাকমা ও সত্যপ্রিয় চাকমা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থী তরুণ চাকমা, রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সাধনা চাকমা, লেকার্স পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী বিধি চাকমা প্রমুখ বক্তব্য দেন। এসময় তারা কর্মসূচি থেকে পূর্ণিমার মৃত্যুর সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক দোষীদের বিচারের দাবি জানান।
এদিকে, একই দাবিতে দুপুর ১২টায় রাঙামাটি রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পূর্ণিমা চাকমার মামাতো ভাই ও বাংলাদেশ-সুইডেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী পলাশ চাকমা। লিখিত বক্তব্যে পলাশ চাকমা বলেন, ‘আমার বোন পূর্ণিমা চাকমা পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষা লাভের উদ্দেশে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হয়। তাকে ঘিরে আমাদের স্বপ্ন ছিল সে একজন চিকিৎসক হয়ে নিজের এলাকা ও দেশের মানুষের সেবা করবে। কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন নিমেষেই শেষ হয়ে গেল।’
পলাশ চাকমা লিখিত বক্তব্যে দাবি করেন, ‘গত শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ঘটনার দিন পূর্ণিমা চাকমার বাসা পাল্টানোর কথা ছিল। ঠিক সেদিন দুপুরেই তাকে লাশ হতে হলো। বাসার মালিক পুরো ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলে অপপ্রচার চালাচ্ছেন এবং হত্যার ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে চাইছেন। কিন্তু পূর্ণিমা চাকমা কোনোভাবেই আত্মহত্যা করার মতো মেয়ে নয়। এই বাসাতে থাকাকালীন সময়ে তাকে চুরির অপবাদসহ নানানভাবে অপমান, মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে। বাসার মালিক মল্লিকা দেওয়ান দাবি করেন, পূর্ণিমা গলায় দড়ি লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে, কিন্তু সেই ঘরে কোনো চেয়ার-টেবিল কিংবা ওড়না ছিল না। আর ঘরের মেঝে থেকে সিলিঙের যে উচ্চতা, পূর্ণিমার পক্ষে কোনো ধরনের চেয়ার-টেবিল ব্যবহার ছাড়া আত্মহত্যা করারও কোনো সুযোগ নেই। এমনকি পূর্ণিমার গলায় ও শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাই আমরা পুরো ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হিসেবে মনে করছি। একইসঙ্গে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি, যেন আর কোনো শিক্ষার্থীকে অকালে ঝরে পড়তে না হয়।’
পলাশ লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলার পর মল্লিকা দেওয়ান ও তার পরিবারের লোকজনকে আমাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা দিয়ে সমঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু আমরা তো টাকা দিয়ে দফারফা করতে চাই না। টাকা দিয়ে তো বোনকে ফিরে পাব না। আমরা বোন হত্যার বিচার চাই। সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে দোষীদের বিচার চাই।’
পূর্ণিমার মৃত্যুর ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পলাশ চাকমা বলেন, ‘আমরা হত্যা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
এদিকে, রাঙামাটি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বলেন, কলেজছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। তবে এখন পর্যন্ত পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ অভিযোগ দেয়নি।’
উল্লেখ্য, গত ২৯ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে কলেজছাত্রী পূর্ণিমাকে অচেতন অবস্থায় রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার মৃত্যুর খবর শুনে উধাও হয়ে যান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা। ঘটনার পরের দিন শনিবার দুপুরে পূর্ণিমা চাকমার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন শেষে পরিবারের কাছে লাশ হস্তান্তর করে পুলিশ। কলেজছাত্রী পূর্ণিমা চাকমা জেলার জুরাছড়ি উপজেলার ৪ নম্বর দুর্গম দুমদুম্যা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বগাখালী এলাকার সাধন চাকমার মেয়ে। তিনি রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। পড়ালেখার সুবাদে জেলা শহরের রাজবাড়ী এলাকার মল্লিকা দেওয়ানের বাসায় থাকত পূর্ণিমা। মল্লিকা দেওয়ানের বাসায় রাখার ব্যবস্থা করেন দেন জুরাছড়ি উপজেলার বাসিন্দা অঞ্জলী চাকমা (গান্ধী)। এ ঘটনার পর থেকে মল্লিকা দেওয়ান ও গান্ধী চাকমার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।