কাপ্তাই লেক রক্ষায় ব্যতিক্রমী নৌ-প্রচারাভিযান
‘বন উজার রোধ করি, কাপ্তাই লেকের পানি দূষণমুক্ত রাখি’ এই স্লোগানে রাঙামাটিতে এক ব্যতিক্রমী নৌ-প্রচারাভিযান ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শনিবার শহরের ফিসারিঘাট এলাকা থেকে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আশিকা ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েটসের আয়োজনে এই নৌ-প্রচারাভিযান শুরু এবং লেকের মধ্যবর্তী স্থানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
ব্যতিক্রমী এই নৌ-প্রচারাভিযান ও আলোচনা সভায় অংশ নেন সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, উন্নয়ন সংগঠক, সাংবাদিক, পরিবেশকর্মী ও সচেতন নাগরিকরা।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তাপস রঞ্জন ঘোষ, রাঙামাটি পৌরসভার প্যানেল মেয়র কালায়ন চাকমা, কাপ্তাই হ্রদ সংরক্ষণ কমিটির সদস্য এম জিসান বখতিয়ার।
হ্রদের মধ্যবর্তী স্থানে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা বক্তারা বলেন, বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছাড়াও অনেক ধরনের স্থানীয় পাখি, সরীসৃপ, স্তন্যপায়ী এবং উভয়চর প্রাণী কাপ্তাই হ্রদে বিচরণ করে থাকে। এক কথায় কাপ্তাই হ্রদ জীববৈচিত্র্যের আধার এবং বিচরণ ক্ষেত্র। জনসংখ্যার বৃদ্ধির ফলে দিন দিন হ্রদের পানি দূষিত হচ্ছে এবং ব্যবহারের অনুপযোগী হচ্ছে এবং প্রাকৃতিক বন উজাড় হওয়ায় নেমে যাচ্ছে পানির স্তর। প্রকৃতিক বন উজাড় না করে সংরক্ষণ করলে পানির উৎসমূহ জীবিত থাকবে এবং কাপ্তাই হ্রদের পানির স্তর স্বাভাবিক থাকবে। ফলে এই হ্রদ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বক্তারা বলেন, রাঙামাটির ১০ উপজেলার মধ্যে আট উপজেলা সম্পূর্ণ এবং আশিংক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই কাপ্তাই হ্রদ। এ লেকের সঙ্গে হাজারো মানুষের জীবনধারা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কাপ্তাই লেক আমাদের যোগাযোগ সেবার পাশাপশি পানি, সেচ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, মৎস্য সম্পদ সর্বোপরি জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূমিকা রেখে আসছে।
এ ছাড়া কাপ্তাই লেকের ওপর ভিত্তি করে অনেক পর্যটন শিল্প গড়ে উঠেছে, যা আমাদের অর্থনীতি এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। হ্রদের পাশে বিভিন্ন স্থানে দিনের পর দিন দখল বেড়েই যাচ্ছে এবং প্রত্যেকের বাড়ির ময়লা ও আবর্জনা সবাই হ্রদের পানিতে ফেলে থাকে। যার ফলে হ্রদের পানি দূষণের সঙ্গে সঙ্গে কাপ্তাই হ্রদ ভরটা হয়ে যাচ্ছে।
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আল মামুন জানান, কাপ্তাই হ্রদকে দূষণমুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রীকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন হতে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবনাটি প্রধানমন্ত্রী গ্রহণ করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেছেন।
কর্মসূচি পালন শেষে শহরের বিভিন্ন নৌঘাটে প্রচারপত্র বিলি করা হয়। এতে হ্রদ দূষনমুক্ত রাখার আহ্বান সংবলিত নানা দাবি ও অনুরোধ তুলে ধরা হয়।