কুষ্টিয়ায় পৃথক হত্যা মামলায় একজনের মৃত্যুদণ্ড, চারজনের যাবজ্জীবন
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলায় স্ত্রী হত্যায় একজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং সদরে অপর হত্যা মামলায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেইসঙ্গে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ সোমবার দুপুরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম তিন আসামির উপস্থিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ড আসামির নাম শাহিনুল ইসলাম। তিনি মিরপুর উপজেলার নওদা খাড়ারা গ্রামের বাসিন্দা।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার খলিলুর রহমান। একই এলাকার সাইমুম ওরফে জিতু, মিতুল এবং পলাতক আসামি জুয়েল রানা। এ মামলায় পাঁচজন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর কুষ্টিয়া শহরের চাঁদাগাড়া ড্রেনের মধ্যে রেজাউলের গলাকাটা লাশ দেখতে পায় স্থানীয়রা। লাশ উদ্ধারের তিন থেকে চারদিন আগে আসামি জুয়েল রেজাউলের কাছে একটি মোবাইল রেখে ৩০০ টাকা নেয়। টাকা ফেরত না দিয়ে মোবাইল ফেরত নেওয়ার জন্য রেজাউলের কাছে যায় জুয়েল। পরে ২১ অক্টোবর রাতে আসামি জুয়েল ও জিতু রেজাউলকে ডেকে নিয়ে যায় এবং মোবাইল ফেরত নেওয়াকে কেন্দ্র করে আসামিরা ওই রাতেই নির্মমভাবে হত্যা করে ড্রেনের ভেতর ফেলে দেয় রেজাউলের লাশ।
খবর পেয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশ রেজাউলের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় ২২ অক্টোবর নিহত রেজাউলের বড় ভাই রবিউল ইসলাম আসামিদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। নিহত রেজাউল ইসলাম (৩০) কুষ্টিয়া শহরের আড়ুয়াপাড়া এলাকার মৃত ইন্তাজ আলীর ছেলে।
মামলার তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ২২ এপ্রিল তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) খবির আহমেদ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আদালত এ মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে আজ চার আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন।
আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী বলেন, ‘রেজাউল হত্যা মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় চার আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলায় পাঁচজন আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে কুষ্টিয়ার মিরপুরে স্ত্রী চম্পা খাতুন হত্যার দায়ে স্বামী শাহিনুল মালিথাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ দুপুরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. তাজুল ইসলাম আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে মিরপুর উপজেলার নওদা খাড়ারা গ্রামে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে ঘুমন্ত অবস্থায় রাতে চম্পা খাতুনের শরীরে ও বসতঘরে কেরোসিন দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তার স্বামী শাহিনুল মালিথা। ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য স্ত্রী চম্পা খাতুনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চারদিন পরে চম্পা খাতুন মারা যান। পরে চাচা শাহাদত বাদী হয়ে মিরপুর থানায় এজাহার করেন।
তদন্ত সাপেক্ষে পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আখতারুজ্জামান ২০১৬ সালে স্বামী শাহিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। মামলার শুনানি শেষে আজ এ রায় ঘোষণা করেন আদালত।