কুষ্টিয়ায় স্ত্রী হত্যায় স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় স্ত্রীকে হত্যার দায়ে স্বামী আজিজুল হককে (৩০) যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। আজ রোববার দুপুরে কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১-এর বিচারক তাজুল ইসলাম আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করেন।
সাজাপ্রাপ্ত আজিজুল হক উপজেলার চরবানিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৮ এপ্রিল রাত ১২টায় আজিজুল তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা জেসমিনকে যৌতুক দাবিতে নির্যাতন শেষে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরদিন সকালে সংবাদ পেয়ে জেসমিনের লাশ উদ্ধার করে কুমারখালী থানা পুলিশ।
মামলার বাদী নিহত জেসমিনের বাবা রওশন আলী মালিথার অভিযোগ, নিকট প্রতিবেশী স্বামী আজিজুল জেসমিনকে কলেজে যাওয়া আসার পথে নানাভাবে মানসিক চাপ সৃষ্টি করত। এরপর প্রেমের সম্পর্ক ও শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করতে বাধ্য করে। একপর্যায়ে তিনি জেসমিনকে গোপনে বিয়ে করেন। ঘটনাটি পারিবারিকভাবে জানাজানি হওয়ার পর দুই পরিবার সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে মেনে নেয়। কিন্তু বিয়ের পর মাত্র দুই মাস পার হতেই আজিজুল তার আসল পরিচয়ের মুখোশ খোলে। তিনি তিন লাখ টাকা যৌতুক হিসেবে দাবি করেন। জেসমিনের বাবা-মেয়ের শান্তির কথা ভেবে এক লাখ টাকা আজিজুলকে দেন। বাকি টাকা দেবে বলে সময় চেয়ে নেন। আজিজুলের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাকি দুই লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় জেসমিনের ওপর নির্যাতন শুরু করেন তিনি। ঘটনার দিনও একইভাবে নির্যাতনে জেসমিনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করায় জ্ঞানশূন্য হয়ে যায়। এ সময় শ্বাসরোধ করে জেসমিনের মৃত্যু নিশ্চিত করেন আজিজুল।
রওশন আলী বলেন, ‘বিয়ের মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই জেসমিনকে হত্যা করেন আজিজুল। অথচ এই হত্যা মামলাটির ন্যায় বিচার পেতে আমি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। ঘটনার সময় পুলিশ লাশ উদ্ধার কারে সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল জেসমিন আত্মহত্যা করেছে। স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের চাপে এবং থানা পুলিশ আসামি পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় তখন বুঝেছিলাম আমার মেয়ে হত্যার ন্যায় বিচার পাচ্ছি না। সে কারণে সঠিক তদন্ত ও ন্যায় বিচার প্রার্থনা করে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম।’
রওশন আলী আরও বলেন, ‘আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) তদন্তভার দেয়। মামলাটি তদন্ত শেষে যৌতুক নির্যাতনে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামী আজিজুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগ দাখিল করে পিবিআই।’
কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী জানান, গৃহবধূ জেসমিন হত্যায় নালিশী মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদনে দীর্ঘ সাক্ষ্য শুনানি শেষে আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আসামি আজিজুলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে। গৃহবধূ জেসমিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দীর্ঘপথ পরিক্রমার মধ্যদিয়ে বিজ্ঞ আদালত আজ যে রায় দিয়েছেন তাতে বাদী ন্যায় বিচার পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন।’