কুড়িগ্রামে সৈয়দ শামসুল হকের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালন
গভীর শ্রদ্ধায় কুড়িগ্রামে সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে সব স্তরের মানুষ। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে শায়িত সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সমাধিতে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষজন পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানায়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মিনহাজুল ইসলাম, কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মির্জা নাসির উদ্দীন, একুশে পদকপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন, কবিপুত্র দ্বিতীয় সৈয়দ হক, জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক শ্যামল ভৌমিক প্রমুখ।
প্রয়াত লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ছেলে দ্বিতীয় সৈয়দ হক বেলন, ‘আমার বাবার সমাধি ও কমপ্লেক্স নির্মাণের কাজটি ঝুলে আছে। আমি চাই দ্রুত এ কাজ শুরু করা হোক।’
কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও একুশে পদকপ্রাপ্ত আইনজীবী আব্রাহাম লিংকন বলেন, দেশবরেণ্য লেখক সৈয়দ শামসুল হকের সমাধি সৌধ ও কমপ্লেক্সটি নির্মাণ হলে এখানে তাঁর সাহিত্যকর্ম নিয়ে গবেষণা হবে। উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এখানে এসে তার বই পড়তে পারবে।
বাংলা সাহিত্যের সব্যসাচী খ্যাত সৈয়দ শামসুল হক ১৯৩৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম শহরের থানাপাড়ার পৈতৃক নিবাসে জন্মগ্রহণ করেন। সৈয়দ হক তার মা-বাবার আট সন্তানের মধ্যে সবার বড়। বাবা সৈয়দ সিদ্দিক হুসাইন ও মা হালিমা খাতুন। বাবা পেশায় ছিলেন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। বাংলা সাহিত্যের সব শাখায় সমানভাবে পদচারণার জন্য সৈয়দ শামসুল হককে ‘সব্যসাচী লেখক’ বলা হয়।
সৈয়দ শামসুল হক ১৯৬৪ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়সে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন। বাংলা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে ১৯৮৪ সালে একুশে পদক এবং ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।
১৯৫০-এর দশকে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘দেয়ালের দেশ’। এ ছাড়া তার লেখা অন্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘খেলারাম খেলে যা’, ‘নিষিদ্ধ লোবান’, ‘সীমানা ছাড়িয়ে’, ‘নীল দংশন’, ‘বারো দিনের জীবন’, ‘তুমি সেই তরবারী’, ‘কয়েকটি মানুষের সোনালী যৌবন ও নির্বাসিতা’।
সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে—একদা এক রাজ্যে, বৈশাখে রচিত পঙক্তিমালা, পরানের গহীন ভিতর, অপর পুরুষ, অগ্নি ও জলের কবিতা। পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও নুরুলদীনের সারা জীবন সৈয়দ শামসুল হকের বিখ্যাত কাব্যনাট্য।
২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে সৈয়দ শামসুল হকের মৃত্যু হয়। কবির শেষ ইচ্ছে অনুযায়ী তাঁর মরদেহ জন্ম শহর কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে সমাহিত করা হয়।