ক্রাচে ভর দিয়ে কুড়িগ্রাম থেকে রংপুরে ৭০ ছুঁইছুঁই আজিজার
আজিজার রহমান। এক পা একেবারেই অচল। ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটেন। বয়সও ৭০ ছুঁইছুঁই। বাড়ি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার হাতিয়া গ্রামে। বিএনপির গণসমাবেশে যোগ দিতে তিনিও পৌঁছেছেন রংপুর। যদিও পথে কমতি ছিল ‘ঝুটঝামেলার’।
আজিজার বলেন, ‘বাবা, ধর্মঘটের কারণে মুই শোকরবারে (শুক্রবার) অংপুর আচচোং (এসেছি)।’
শুধু আজিজার নয়, গণসমাবেশের উদ্দেশে শুক্রবার রংপুর পৌঁছান পাটগ্রাম উপজেলার সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ প্রধান। তিনি বলেন, ‘রংপুর থেকে আমার বাড়ির দূরত্ব প্রায় দেড়শ কিলোমিটার। ধর্মঘটের কারণে আমি কখনও ইজিবাইক, কখনও অটোরিকশা ও ভ্যানে চড়ে এসেছি রংপুরে।’
একই উপজেলার বুড়িমারী স্থল বন্দরের কাছ থেকে রংপুর গণসমাবেশস্থলে পৌঁছান প্রায় ৮০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল করিম প্রধান। তিনি বলেন, ‘ভোরে রওনা করে শতাধিক মানুষ বিভিন্ন বিকল্প যানবাহনে, কখনো পায়ে হেঁটে এসেছি।’
আগামীকাল শনিবার দুপুর ২টায় রংপুর কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে বিএনপির গণসমাবেশ। সমাবেশের ঠিক একদিন আগে রংপুর জেলা মটর মালিক সমিতি ৩৬ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট শুরু করে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের সমাবেশকে বানচাল করতেই এ ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ বিএনপির এ দাবিকে অস্বীকার করছে।
রংপুরের কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের পাশেই ঘোরাফেরা করছিলেন বজলুর রশিদ। তিনি ঢাকায় থাকেন। বাড়ি রংপুর। সমাবেশকে কেন্দ্র করে এলাকায় এসেছেন তিনি। বজলুর বলেন, ‘বিএনপির মধ্যে এক ধরনের চাঙাভাব দেখা যাচ্ছে। এটাকে বিএনপির জোয়ারও বলা যেতে পারে। এই যেমন, আমি ঢাকা থেকে চলে এসেছি।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সরকারের কোন বাধাই মানবেন না বিএনপির নেতাকর্মীরা। চারিদিকে সরকার বিরোধী গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।’
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সমাবেশের সমন্বয়কারী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, ‘শনিবার রংপুর হবে জনতার শহর, সমাবেশে উপস্থিত হয়ে বিপুল মানুষ সরকারকে লাল কার্ড দেখাবেন।’
রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা অভিযোগ করে বলেন, ‘তাদের নেতাকর্মীদের প্রশাসন নানান ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। আমরা কোন কিছুকেই ভয় পাই না।’
এদিকে, কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠে মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা কয়েক দিন ধরে রংপুরে অবস্থান করছেন। কাল দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা গণসমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
অন্যদিকে, রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতির ডাকে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে রংপুর জেলায় পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এর ফলে রংপুর জেলার সব রুটের পাশাপাশি রংপুর দিয়ে অন্যান্য জেলাতেও বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কাল শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে।
মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, নসিমন-করিমন, অটোরিকশা চলাচল বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা মোটর মালিক সমিতি। যদিও বিএনপি মনে করছে, তাদের সমাবেশকে বাঁধাগ্রস্ত করতেই এই ধমর্ঘট। আর বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির ডাকা গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে পরিবহণ ধর্মঘটের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান গতকাল বলেছেন, ‘পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা যদি মনে করেন, বাসটি চললে কোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, আগের মতো যেমন বাস পুড়িয়ে দিয়েছে (বিএনপি-জামায়াত), সে অভিজ্ঞতা তো রয়েছে। সে অভিজ্ঞতা থেকে তাঁরা যদি সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আমাদের কিছু বলার নেই।’