ক্লান্ত কৃষকের জন্য মাঠে দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার
ফসলের মাঠে দৃষ্টিনন্দন একটি বিশ্রামাগার। কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিচ্ছেন ক্লান্ত কৃষকরা। একটু দূরে যাঁদের বাড়ি, তাঁরা এই বিশ্রামাগারেই খেতে পারছেন দুপুরের খাবার। এখানেই টিউবওয়েলের পানি পান করে তৃষ্ণা মেটাতে পারছেন কিষান-কিষানিরা। এমনই এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে কৃষকসহ সবার মধ্যে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছেন চাঁদপুর কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির। বার্তা সংস্থা ইউএনবি এ খবর জানিয়েছে।
জানা গেছে, নির্বাচিত হওয়ার পর শাহজাহান শিশির অনেক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। ‘গাছেরও প্রাণ আছে’— এ কথা সামনে রেখে গাছে পেরেক দিয়ে লাগানো সাইনবোর্ড তুলে ফেলা, বজ্রপাত থেকে বাঁচতে রাস্তার পাশে পাঁচ হাজার তালগাছের বীজ ও চারা রোপণ কিংবা ধানের ন্যায্যমূল্য কৃষকের হাতে তুলে দিতে নিজেই গাড়িতে মাইক বেঁধে প্রচারে নেমে পড়ার মতো কাজ করে সব মহলে এরই মধ্যে বেশ প্রশংসিত হয়েছেন শিশির।
আগামী অর্থবছরে কচুয়ার বিভিন্ন ফসলি মাঠে কাজ করা ক্লান্ত কৃষকের জন্য দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার স্থাপনের কথা। তবে এরই মধ্যে প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কচুয়া উপজেলার কড়াইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মো. মানিক মিয়ার মাধ্যমে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে এমনই এক দৃষ্টিনন্দন বিশ্রামাগার তৈরি করেছেন। সেখানে রয়েছে বিশুদ্ধ পানি পান করার ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট। এ ছাড়া সেখানে কাজের ফাঁকে ক্লান্ত কিষান-কিষানি বিশ্রাম নিতে পারেন। আর দূরে যাদের বাড়ি, তাঁরা মাঠেই দুপুরের খাবার খেতে পারেন।
আলাপকালে কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির জানান, আগামী অর্থবছরে উপজেলার বাকি ১১টি ইউপিতে ১১টি অনুরূপ বিশ্রামাগার নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
শিশির আরো জানান, কড়াইয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দুইশ একর চাষযোগ্য জমির মাঝখানে স্থানীয় কৃষক ভাইদের জন্য এই বিশ্রামাগার তৈরি করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের ফান্ড থেকে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা।
এদিকে ওই বিশ্রামাগারে বিশ্রাম নিতে যাওয়া স্থানীয় কৃষক নুর মোহাম্মদ, মমিন, আবু মোল্লা, কাউছার মিজিসহ আরো কয়েকজন এ উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
কৃষকরা জানান, ওই বিশ্রামাগারে একসঙ্গে প্রায় বিশজন কৃষক বসতে পারেন। সঙ্গে একটি টয়লেটের ব্যবস্থা আছে, পানির জন্য একটি নলকূপও বসানো হয়েছে। কৃষকদের দীর্ঘপথ যেন পাড়ি দিতে না হয়, সে জন্য একটি রাস্তাও করা হয়েছে। রাস্তার দুপাশে প্রচুর তালের আঁটি রোপণ করা হয়েছে, যেন বর্ষায় বজ্রপাত থেকে বাঁচতে তালগাছের নিচে এসে নিরাপদ আশ্রয়ে পথিক, কিষান-কিষানি বসতে পারেন।
শাহজাহান শিশির কিছুদিন আগেই পরিবেশ বাঁচাতে পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবহার কমানোর জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিয়েছেন আরো ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তিনি সবাইকে জানিয়েছিলেন, পুরোনো প্লাস্টিক-পলিথিন উপজেলা পরিষদে জমা দিলেই দেওয়া হবে পুরস্কার।
জানানো হয়, একটি হারমোনিয়ামের জন্য জমা দিতে হবে অন্তত দশ কেজি পলিথিন বা বোতল। এ ছাড়া একটি ফুটবলের জন্য এক কেজি আর একসেট ক্রিকেট সরঞ্জাম পেতে হলে জমা দিতে হবে পাঁচ কেজি পুরোনো পলিথিন বা পুরোনো বোতল। এরই মধ্যে এ উদ্যোগের অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে বলেও জানান শিশির।
শাহজাহান শিশির বলেন, ‘প্রচুর পুরোনো বোতল পেয়েছি। রিসাইক্লিং ব্যবসায়ীদের কাছে এসব পুরোনো বোতল বিক্রি করেছি। গ্রামের লোকজন এক টনের মতো পলিথিন জমা দিয়েছে।’
উপজেলা চেয়ারম্যানের এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগকে বরাবরই সাধুবাদ জানিয়েছে কচুয়া উপজেলাবাসী। নতুন এই উদ্যোগকেও সাদরে গ্রহণ করেছে তাঁরা। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ও ফসলি মাঠের মাঝখানে কৃষকদের জন্য বিশ্রামাগার নির্মাণের এমন উদ্যোগ জেলায় তথা সারা দেশে নেওয়া যেতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজন।
দুবছর আগে শাহজাহান শিশির কচুয়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ রাস্তার পাশের খালি জায়গায় ৬২ হাজার বিভিন্ন জাতের ফলদ ও বনজ বৃক্ষের চারা একযোগে রোপণ করে সব মহলে প্রশংসিত হয়েছিলেন।