কয়লা সংকটে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধের আশঙ্কা
ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে কয়লাচালিত ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা পাওয়ার প্লান্টের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) প্ল্যান্ট ম্যানেজার শাহ আবদুল মওলা বার্তা সংস্থা ইউএনবিকে বলেন, ‘আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা হয়তো আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারব না।’
বিসিপিসিএল, চায়না ফার্ম চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি) এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (এনডব্লিউপিজিসিএল) যৌথ উদ্যোগে মালিক ও পায়রা পাওয়ার প্লান্টের পরিচালনা করছে।
প্ল্যান্ট ম্যানেজার বলেন, প্ল্যান্টে বর্তমানে একটি ইউনিট চলছে যার ৬৬০ মেগাওয়াট রয়েছে এবং অন্য ৬৬০ মেগাওয়াট ইউনিট বন্ধ রয়েছে।
মওলা বলেন, ‘আমরা ১৯ জানুয়ারি থেকে একসঙ্গে উভয় ইউনিট পরিচালনা করার পরিকল্পনা করেছি। দুই ইউনিট চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত কয়লার বর্তমান মজুদ দিয়ে চলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘তবে কয়লার নতুন চালান পাওয়া না গেলে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে আমাদের দুটি ইউনিটই বন্ধ করে দিতে হবে।’
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টকে পুরোদমে চালু করতে প্রতি মাসে তিন লাখ মেট্রিক টন কয়লা আমদানি করতে হবে।
প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে প্রতি মাসে ব্যয় করতে হয় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তারা বলেন, বিসিপিসিএল সাধারণত কয়লা আমদানির জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খোলে। কিন্তু সম্প্রতি ডলার সংকটের কারণে এলসি খোলার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে সোনালী ব্যাংক।
সমস্যার কথা স্বীকার করে আব্দুল মওলা বলেন, বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগে অবহিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছরের ২১ মার্চ পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন, যখন তিনি দেশের শতভাগ বিদ্যুৎ কভারেজ ঘোষণা করেন।
প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়ে আলোকিত করার এই মাইলফলক অর্জন বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে।
বিসিপিসিএল ৯৮২ দশমিক ৭৭ একর জমিতে উন্নয়ন অংশীদারিত্বের অংশ হিসাবে দুই বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ব্যয়ে আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে।
চীনের রপ্তানি-আমদানি ব্যাংক প্রকল্পটির জন্য এক দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ঋণ দিয়েছে। কোম্পানিটি ২০১৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে।
আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই ধরনের কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশ্বের ১৩তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় সপ্তম।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্ল্যান্টের জন্য ব্যবহৃত আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির লক্ষ্য সরকারের নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিবেশ রক্ষা করে।
প্রায় পাঁচ মাস ধরে পরীক্ষা চালানোর পর পায়রা পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটটি ২০২০ সালের মে মাসে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে। ২০২০ সালের অক্টোবরে, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে ৬৬০ মেগাওয়াট প্ল্যান্টের দ্বিতীয় ইউনিটটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে।
পায়রা এবং আরও একটি ১৩২০ মেগাওয়াট রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টি প্লান্ট থেকে বিদ্যুত সরবরাহের লক্ষ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। যেগুলো ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ঢাকা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ পাঠিয়েছে।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা পোড়ানো হচ্ছে। এটির একটি ৭৬ দশমিক ৩০ একর ডাম্পিং জোন রয়েছে যেখানে ২৫ বছরের জন্য পণ্য রাখা যেতে পারে।
কারখানাটি বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করছে। এর নিজস্ব জেটি রয়েছে যার পরিবাহক বেল্ট একই সময়ে চারটি জাহাজ থেকে প্রতি ঘন্টায় তিন হাজার ২০০ টন কয়লা আনলোড করতে পারে।
তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০০৯ সালে মাত্র তিন হাজার ২০০ মেগাওয়াট থেকে ২৫ হাজার ৫১৪ মেগাওয়াটে পৌঁছেছে।