কয়েকটি কারণে বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয় : মির্জ্জা আজিজুল
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে যেসব লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, কয়েকটি কারণে তা বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এটি একটি আশান্বিত বাজেট। কিন্তু বাস্তবায়ন সবচেয়ে দুরূহ কাজ হবে।’ আজ শুক্রবার মোবাইল ফোনে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথমত, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এটি অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশ্বব্যাংক ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাক্কলন করেছে ১ শতাংশ, সেটি হয়তো আরো বেশি হবে। সেখান থেকে ৪-৫ শতাংশ ধরা হলে উচ্চাভিলাষী হতো না।’
রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্য ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, এর মধ্যে এনবিআরের কাছ থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। ইতোমধ্যে এনবিআর বলেছে, তাদের পক্ষ থেকে এটি আদায় সম্ভব হবে না। ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নামায় ভ্যাট আদায় হবে না। আমদানিতে ধসের ফলে শুল্ককর আদায় হবে না। অনেকের আয় কমে গেছে। ফলে আয়কর আদায় কমে যাবে। করপোরেট ট্যাক্স আদায় কমবে। এর মধ্যে বেশকিছু করের মাত্রা কমানো হয়েছে।
সব মিলিয়ে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বাজেট বড় মাত্রায় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সুতরাং আয় হবে না। এ লক্ষ্যমাত্রার বাজেট বাস্তবায়ন করা হলে ঘাটতির মাত্রা আরো বেশি হবে। বাজেটে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি ধরা হয়েছে। তবে অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যয় করতে পারে না। ফলে ঘাটতির মাত্রা সেখানে কমতে পারে।
অর্থায়নের সূত্রের মধ্যে ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে ৮৫ হাজার কোটি টাকা। যদি বেশি মাত্রার অর্থ আসে, তা হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে। সরকারের উচিত বৈদেশিক সাহায্য ও বিনিয়োগ এবং সহজ শর্তের ঋণ নেওয়ার চেষ্টা করা। সামাজিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা খাতের বরাদ্দ ঠিক আছে। বিশ্লেষণ করতে লাগবে। যেগুলো দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, এগুলোর কতটুকু সামঞ্জস্য তা-ও দেখতে হবে।
মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে পুঁজিবাজার মৃতপ্রায়। সরকার যদি ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে থাকে, তবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রভাব কমে যাবে। এবারের বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। এতে করোনার কারণে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মের কোনো উপায় রাখা হয়নি। শিল্প খাত বাঁচাতেও তেমন কিছু দেখছি না। অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ আগেও ছিল। এবারও দেওয়া হয়েছে। অতীতে এটাতে খুব বেশি লাভ দেখা যায় না। তবে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কিছুটা কমবে। করমুক্ত সর্বনিম্ন হার এবং করপোরেট করহার কমানোর উদ্যোগ ভালো হয়েছে।
প্রতিবছর বাজেটের আকার বাড়ানো এখন নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। এ ধারা থেকে সরে আসতে হবে। জাতীয় বাজেটের আকার বাস্তবসম্মত হতে হবে। তাহলে বাজেটের ব্যয় জোগাড় সহজ হবে।
কয়েক বছর থেকে অবাস্তব বাজেটের আকার নির্ধারণ করে অবাস্তব রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এতে ঘাটতি বেড়েই চলেছে। এবারও এর ব্যতিক্রম হলো না। এই অবাস্তব হিসাবের ওপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন কর্মসূচি নির্ধারণ করা হচ্ছে। এর পরিণতি হিসেবে অর্থবছরের শেষ সময়ে সব কাটছাঁট করতে হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা।