খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার আবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
বিএনপির চেয়ারপারসন এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর লেখা একটি চিঠি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে দিয়েছেন ২০ দলীয় জোটের শরীক নেতারা। আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জোটের একটি প্রতিনিধিদল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ আবেদন পেশ করেন।
আবেদনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে নিতে একটি আবেদন নিয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সভাপতির নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এসেছিল। আমি তাঁদের আবেদনটি রেখেছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁরা খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে চান। আমাদের মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম শেষ করে আবেদনটি আমরা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেব।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এ আবেদন আইনগতভাবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। এর আগে আইনমন্ত্রীও বলেছেন। মানবিক কারণেই তিনি (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য কারাগারের বাইরে রয়েছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘বিদেশ থেকে যেকোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে আসতে পারেন। আমাদের হাসপাতালগুলো ওয়েল ইক্যুইপ্ট। বিদেশ থেকে যেকোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এখানে আসতে পারে। বিদেশি চিকিৎসক এলে সে চিকিৎসা ওখানে করা যায়, সে চিকিৎসা এখানেও করতে পারেন। কিছুক্ষণ আগে ইউনাইটেড হাসপাতালের একজন চিকিৎসক আমার এখানে এসেছিলেন, তিনিও আমাকে একই কথা বলেছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘২০ দলের যে জোট, সে জোটের পাঁচ সদস্য এখানে এসেছেন। তাঁদের আবেদনটি ছিল যে, খালেদা জিয়া অসুস্থ, তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেন। তিনি একদম জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছেন। কাজেই তাঁকে আরও উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া যায় কি না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁদের একটি আবেদন এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তাঁদের বলেছি যে, এর আগেও প্রধানমন্ত্রীর কাছে খালেদা জিয়ার ছোট ভাই একটা আবেদন করেছিলেন। সেটাও আমি আইন মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠিয়েছিলাম। আইনমন্ত্রী যথাযথভাবে পার্লামেন্টের প্রশ্নোত্তরের সময় বিস্তারিত বলেছেন। আমি এটা বলার পর তাঁরা বলেছেন—এটা মানবিক কারণে দেওয়া যায় কি না, বিবেচনা করার জন্য আমার কাছে দিয়েছেন। এটা আমি যথাযথভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।’
অপর এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপির শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তারা গণঅনশন, মানববন্ধন, দোয়া অনুষ্ঠান করছে। কোনো বাধা দেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু, ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে জনগণের জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তা দমন করা হবে।’
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার আবেদন জানিয়ে একটি চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দিয়েছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের আবেদন আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। তিনি এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আশা করছি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি মানবিকভাবে দেখবেন। খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন। দেশের জন্য তাঁর অনেক অবদান রয়েছে। তিনি আজ জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দ্রুত বিদেশে নিতে হবে।’
সৈয়দ ইব্রাহিম আরও বলেন, ‘অতীতের রাজনৈতিক মান-অভিমান ও তিক্ততা ভুলে গিয়ে সরকার খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে দ্রুত বিদেশে নেওয়ার অনুমতি দেবেন।’
২০ দলীয় জোটের প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির চেয়ারম্যান কারি এমএ তাহের, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা।