গৃহহীনদের কাছে আজ ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী
সরকারের ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার অংশ হিসেবে ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের কাছে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি ঘর হস্তান্তর করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গত সোমবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি এ গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের কাছে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করবেন।’
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আরও জানান, অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পাঁচ জেলার পাঁচটি স্থানের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবেন।
স্থানগুলো হচ্ছে—লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলাধীন চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলাধীন গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলাধীন চর ভেড়ামারা আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড় জেলার পঞ্চগড় সদর উপজেলাধীন মহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলাধীন জাঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প।
আহমদ কায়কাউস জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পঞ্চগড় ও মাগুরার সবগুলো উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে দেশব্যাপী মোট ৬৭ হাজার ৮০০টি ঘর দেওয়া হচ্ছে। এ ৬৭ হাজার ৮০০ ঘরের মধ্যে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল ৩২ হাজার ৯০৪টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বাকি আট হাজার ৬৬৭টি ঘর নির্মাণাধীন।
প্রকল্পের আওতায় ২০২১-২০২২ পর্যন্ত এক লাখ ৮৫ হাজার ১২৯টি বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি, ৬৩ হাজার ৯৯৯ গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার তাদের মাথার ওপর ছাদ পায়। আর, গত বছরের ২০ জুন আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৩৩০টি পরিবার ঘর পায়
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ে সরকার ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই ও জলবায়ু সহিষ্ণু করে গড়ে তুলতে ঘরগুলোর নকশা পরিবর্তন করে। এতে ঘরগুলোর নির্মাণ খরচ বেড়ে যায়। আর, এজন্যই এখন গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষরা দুই শতাংশ জমির ওপর আরও উন্নতমানের টিন-শেডের আধা-পাকা ঘর পাবে।
ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই করে গড়ে তোলায় প্রতিটি ঘরের নির্মাণব্যয় এক লাখ ৯১ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত হয়।
সরকার ঘরগুলোকে অধিকতর টেকসই করে নির্মাণ করতে মজবুদ কড়ি কাঠ, পাথরের সর্দল ও রিইনফোর্স কংক্রিট কলাম (আরসিসি) পিলার ব্যবহার করা হয়েছে।
আহমদ কায়কাউস জানান, ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ঘরের নির্মাণের জন্য প্রায় চার হাজার ২৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় পর্যায়ের আওতায় চর অঞ্চলের জন্য এক হাজার ২৪২টির মতো বিশেষভাবে নকশা ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, ঘূর্ণিঝড় কিংবা বন্যার মতো যেকোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশেষভাবে স্থানান্তরযোগ্য করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছে—যাতে করে বাড়িগুলো অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের আবাসনের জন্য সরকার খাস জমি ছাড়াও ১৯১ দশমিক ৭৯ একর জমি ক্রয় করেছে। বিশ্বের এটা একমাত্র দৃষ্টান্ত যে, কোনো দেশের সরকার এ ধরনের কাজে জমি ক্রয় করেছে। জমি ক্রয়ের জন্য ১৩৪ দশমিক ৪৯ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে।
ক্রয় করা জমিতে যে ঘরগুলো নির্মিত হয়েছে, সেখানে মোট আট হাজার ৪৬২টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারের আবাসনের ব্যবস্থা হবে।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে সরকার এ প্রকল্পের জন্য সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে পাঁচ হাজার ৫১২ দশমিক ০৪ একর জমি উদ্ধার করে।
সরকারের উদ্ধার করা এ খাস জমির বাজার মূল্য দুই হাজার ৯৬৭ দশমিক ০৯ কোটি টাকা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ১৯৯৭ থেকে মোট পাঁচ লাখ ৯ হাজার ৩৭০টি পরিবারের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ প্রকল্পের আওতায় পুনর্বাসিত পরিবারগুলোকে তিন মাসের জন্য ভিজিএফ কর্মসূচির আওতায় নিয়ে আসা হবে।
সরকারের নীতি অনুযায়ী—এ সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক, বিধবা ও অসমর্থ মানুষদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য কমিউনিটি সেন্টার, মসজিদ, গোরস্থান, পুকুর ও রাস্তাঘাটও তৈরি করা হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকাগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফলদ, বনজ ও ঔষধি গাছ লাগানো হয়েছে। গৃহহীনদের কৃষি কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাবিত আশ্রয়ণ প্রকল্পটির একটি অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে—জাতিসংঘ টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি)’র আবাসনের সঙ্গে এর একটি বিশেষ যোগাযোগ আছে।
বিভিন্ন টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে পথে কেবলমাত্র এ গৃহ নির্মাণ প্রকল্পটিই হতে পারে প্রধান পদচিহ্ন।
অন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, নারী ক্ষমতায়নের মতো ক্ষেত্রগুলোতে এ আবাসন প্রকল্প ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রেখেছে।