চাকরি পাওয়ার পথে সেই ‘ভূমিহীন’ আসপিয়া
মোট ৪৮ জনকে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগের সুপারিশ করেছে বরিশাল জেলা পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বরিশালের হিজলার আলোচিত ‘ভূমিহীন’ কলেজছাত্রী আসপিয়া ইসলাম কাজল।
বরিশালের পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আজ রোববার এনটিভি অনলাইনকে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বরিশাল থেকে মোট ৪৮ জনকে ট্রেনিংয়ের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে আসপিয়া একজন। আগামী ২ জানুয়ারি তাঁদের ওরিয়েন্টেশন হবে।’
আসপিয়ার চাকরি কি নিশ্চিত, এমন প্রশ্নে মারুফ হোসেন বলেন, ‘এখনই নিশ্চিত করে বলা যাবে না, তাঁর চাকরি নিশ্চিত। ট্রেনিংয়েও কিন্তু অনেক বিষয় দেখা হয়। তার মধ্যে শারীরিক যোগ্যতাসহ নানা বিষয় থাকে। ট্রেনিং শেষ হওয়ার পর নিশ্চিত করে বলা যাবে। আপনি বলতে চাইলে বলতে পারেন, তিনি চাকরি পাওয়ার পথে রয়েছেন।’
গতকাল শনিবার রাত ৮টার দিকে জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত নিয়োগপত্র আসপিয়ার হাতে তুলে দেন হিজলা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. মিজান।
এএসআই মো. মিজান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি যে চিঠিটি আসপিয়ার পরিবারকে দিয়ে এসেছি, সেটি নিয়োগপত্র নয়, একটি চিঠি। জেলা পুলিশ লাইনের রিজার্ভ অফিসে আসপিয়া ইসলামকে ডাকা হয়েছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর তাঁকে যেতে বলা হয়েছে চিঠিতে।’
প্রসঙ্গত, পুলিশে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে বরিশাল জেলায় ১০ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পুলিশ সদর দপ্তর। ওই বিজ্ঞপ্তিতে বরিশাল জেলা থেকে টিআরসি পদে সাত নারী ও ৪১ জন পুরুষ নেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী হিজলা থেকে অনলাইনে আবেদন করেন আসপিয়া ইসলাম। ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর বরিশাল জেলা পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলাফলেও কৃতকার্য হন। ২৪ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আসপিয়া।
২৬ নভেম্বর পুলিশ লাইন্সে প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখানেও কৃতকার্য হন আসপিয়া। তবে, চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে নিয়োগ থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। কারণ তিনি বরিশাল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। এ নিয়োগ পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
পরে পুলিশের প্রতিবদনে ‘স্থায়ী ঠিকানা ও ভূমিহীন’ আছপিয়া ইসলাম কাজলকে নিজের জন্মস্থান বরিশালের হিজলাতেই যত দ্রুত সম্ভব জমি ও ঘর দেওয়ার ইঙ্গিত দেয় প্রশাসন।
হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বকুল চন্দ্র কবিরাজ বলেন, ‘আসপিয়ার বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক স্যার আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ভূমিহীন এ পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়।’
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে চলমান আশ্রয়ণ প্রকল্প-২-এর আওতায় আসপিয়ার পরিবারকে ঘর ও জমি দ্রুত সময়ের মধ্যে দেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।