চালক রবিউল ঘুমিয়ে পড়ায় এমন দুর্ঘটনা : হাইওয়ে পুলিশ
পদ্মা সেতুর টোলপ্লাজার কাছে দুর্ঘটনাকবলিত অ্যাম্বুলেন্স চালাচ্ছিলেন রবিউল ইসলাম (২৮)। রবিউল টানা ২৬ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর কারণে ক্লান্ত ছিলেন। রোগী নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৪টার দিকে চলন্ত ট্রাককে ধাক্কা দিলে তিনি সহ ৫ জন ঘটনাস্থলে প্রাণ হারান।
শিবচর হাইওয়ে থানা পুলিশ সূত্র জানায়, খুলনার দীঘলিয়ার চন্দনিমহল এলাকার কাওসার হাওলাদারের ছেলে রবিউল ইসলাম অ্যাম্বুলেন্স চালক। তিনি রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলা যান। ভোলা থেকে ঢাকায় ফেরার পথে বরিশাল শহরের বেলভিউ হাসপাতাল থেকে আরেক রোগী নিয়ে সোমবার রাতে ঢাকায় রওনা হন। বরিশাল হতে ঢাকায় যাওয়ার পথে তিনি বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। দীর্ঘ ২৬ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর কারণে শরীর ক্লান্ত ছিল। গাড়ি চালানোর সময় তিনি হঠাৎ ঘুমিয়ে পরেন। সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ৪টার দিকে তিনি পেছন থেকে একটি চলন্ত ট্রাককে ধাক্কা দেন। তখন অ্যাম্বুলেন্সটি ট্রাকের নিচে ঢুকে যায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান রোগী জাহানারা বেগম (৫৫), তার মেয়ে লুৎফুন্নাহার লিমা (৩০), তাদের স্বজন ফজলে রাব্বি (২৮), আরেক স্বজন ও নবচেতনার বরিশালের সাংবাদিক মাসুদ রানা (২৮), চালক রবিউল, রবিউলের সহকারি জিলানি (২৮)।
মৃত জাহানারা ও লুৎফুন্নাহার লিমার বাড়ি পটুয়াখালী বাউফল উপজেলার কারখানা গ্রামে। জাহানারার স্বামী লতিফ মল্লিক আমেরিকা প্রবাসি। ফজলে রাব্বির বাড়ি একই জেলার দশমিনা উপজেলার আদমপুর গ্রামে। সাংবাদিক মাসুদ রানার বাড়ি বরিশালের আগৈইলঝাড়া উপজেলার বাসাইল গ্রামে। আর রবিউলের সহকারি জিলানির বাড়ি মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর গ্রামে।
শিবচর হাইওয়ে থানার পরিদর্শক আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেল হক বলেন, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোলপ্লাজার ২০০ হতে ৩০০ মিটার সামনে ভোর রাতে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। আমরা জেনেছি অ্যাম্বুলেন্স চালক রবিউল টানা ২৬ ঘণ্টা ডিউটিতে ছিলেন। এ কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। সম্ভবত গাড়ি চালাতে চালাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যার কারণে চলন্ত ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়ার সাথে সাথে অ্যাম্বুলেন্স ট্রাকের নিচে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই গাড়িতে থাকা ৬ জন প্রাণ হারান।
অ্যাম্বুলেন্স চালক রবিউলের ভাই ইয়াছিন হাওলাদার বলেন, তারা দুই ভাই অ্যাম্বুলেন্স চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। রবিউল রোববার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকা থেকে রোগী নিয়ে ভোলা যান। ভোলা থেকে ফেরার পথে তিনি বরিশাল শহর থেকে সোমবার আরেক রোগী নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। ফেরার পথে পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোজ সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হন।
আজ মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টার দিকে রবিউলের স্বজনরা জাজিরা হাসপাতালে আসেন। হাসপাতাল চত্বরে আহাজারি করছিলেন তার শ্বাশুড়ি রানি বেগম। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমার মেয়ে সন্তান সম্ভবা। তাদের ৫ বছর বয়সি আরকজন ছেলে রয়েছে। আমি এখন ওদের দায়িত্ব কার কাছে দেব? আল্লাহ কেন এমন করলেন।
হাইওয়ে পুলিশের ফরিদপুর সার্কেলের এএসপি মো. মারুফ হোসেন বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহত ৬ ব্যক্তির স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সচালক রবিউলের মরদেহ তার স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে বাকি স্বজনরা এলে মরদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি।’