চুক্তির ২৩ বছর পর কতটুকু শান্তি এলো পাহাড়ে
আজ ২ ডিসেম্বর। পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৩ বছর। পাহাড়ে দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে ১৯৯৭ সালের এই দিনে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য শান্তিচুক্তি সই হয়। কিন্তু শান্তি আসেনি পাহাড়ে। অপহরণ, খুন নিত্যদিনের ঘটনা। পাহাড়ি আর বাঙালি দ্বন্দ্ব চরমে।
পার্বত্য জনপদে সংঘাত বন্ধে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী শান্তিবাহিনী তথা জনসংহতি সমিতির মধ্যে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। দলনেতা সন্তু লারমাসহ দুই হাজার সদস্য অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। প্রশ্ন হল চুক্তির এতো বছরেও পাহাড়ে শান্তি এসেছে কি?
শান্তিচুক্তির পক্ষ বিপক্ষের দ্বন্দ্ব এখন চরমে। আঞ্চলিক রাজনীতির নামে চার গ্রুপের সশস্ত্র তৎপরতা, আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, খুন-অপহরণ আর চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। আন্দোলন আর সংঘাতে উত্তাল পার্বত্য জনপথ।
পাহাড়ি-বাঙালি দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের সুযোগে চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী রাজত্ব কায়েম করে চলেছে অস্ত্রধারীরা। চাঁদাবাজি আর অপহরণ পার্বত্যবাসীর জীবনে নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। শান্তিচুক্তি সম্পাদনকারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও জনসংহতি সমিতির নেতারা এটি মানতে নারাজ। এ নিয়ে একে অপরকে দুষছে পার্বত্য অঞ্চলের নাগরিকরা।
শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ের পরিবেশ নিয়ে স্থানীয় পাহাড়ি একজন নারী (৪০) এনটিভিকে বলেন, ‘শান্তি-শৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে। দিঘীনালায় গেলাম, হঠাৎ করে দেখলাম গোলাগুলি হচ্ছে।’
অন্যদিকে, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী এক বাঙালি নাগরিক (৩৫) বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশের সব জায়গায় চিরুনি অভিযান চালানো হয়। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার হচ্ছে এবং বিভিন্ন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কার্যক্রম দমন করা হচ্ছে। কিন্তু পাহাড়ে তাদের কেন দমন করা হচ্ছে না, সেটি আমরা জানতে চাই।’
তবে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙালিরা দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এই চুক্তির সংশোধন চান।
এ ব্যাপারে সাবেক সংসদ সদস্য ও বাঙালি নেতা ওয়াদুদ ভুঁইয়া বলেন, ‘এই চুক্তির দ্বারা পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের কোনো শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এই চুক্তিতে অশান্তি বেড়ে গেছে। পাহাড়ে-পাহাড়ে সন্ত্রাস বেড়ে গেছে। বাঙালিদের অপহরণ করা হচ্ছে। চুক্তির আগে একটি গ্রুপ চাঁদা নিত। এখন গ্রামে-গঞ্জে বাঙালি ও পাহাড়ি সবার কাছ থেকে তিনটি গ্রুপ চাঁদা নিচ্ছে।’
শান্তিচুক্তি সম্পাদনকারী আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও জনসংহতি সমিতির নেতারা এটি মানতে নারাজ। ফলে পার্বত্যাঞ্চলে বাড়ছে রক্তক্ষয়ী সংঘাত।
এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজুরী চৌধুরী বলেন, শান্তিচুক্তির পর, বিশেষ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায়, কৃষি ক্ষেত্রে শিক্ষা ক্ষেত্রে ও পর্যটন ক্ষেত্রে অভাবনীয় যে পরিবর্তন ঘটেছে তা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন।’
জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুধাকর ত্রিপুরা বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের মধ্যেই পাহাড়ের শান্তি নিহিত রয়েছে।’
চুক্তির ২৩ বছর পূর্তি উপলক্ষে খাগড়াছড়িতে কেক কাটা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে পার্বত্য জেলা পরিষদ।