জঙ্গিদের দমনের পাশাপাশি স্বাভাবিক জীবনে ফেরানোর চেষ্টা চলছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
অন্ধকারের পথ ছেড়ে র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন নয়জন জঙ্গি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল তাঁদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে বরণ করেছেন। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শুধু জঙ্গিবাদ কঠোর হস্তে দমন করছি তা-ই নয়, পাশাপাশি ডির্যাডিক্যালাইজেশনের মাধ্যমে তাদের ভুল পথ ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর কুর্মিটোলার র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সদর দপ্তরে নয়জন জঙ্গির আত্মসমর্পণ উপলক্ষে ‘নব দিগন্তের পথে’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
আসাদুজ্জামান খান কামাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন জিরো টলারেন্সের কথা। এটা আমরা কখনো বলি না যে জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করেছি। আমরা বলেছি, জঙ্গিবাদকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। অনেক দেশ থেকে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তোমরা কীভাবে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করছ? আমি বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ কখনো জঙ্গিবাদকে সমর্থন করে না বলেই আমরা জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, “দেশে যখন একের পর এক জঙ্গির উত্থান হচ্ছিল, আমরা সবাই চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। তখন প্রধানমন্ত্রী দেশের কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষকসহ দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য ডাক দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সবাই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন, মানববন্ধন হয়েছে, সমাবেশ হয়েছে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে। স্কুলের শিক্ষার্থীরাও গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুঁলিয়েছিল—‘জঙ্গিবাদকে সমর্থন করি না’।”
এখন অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘পঞ্চগড়ে হিন্দু ইসকন মন্দিরে পুরোহিতকে হত্যা, বৌদ্ধ পুরোহিতকে হত্যা, শিয়া মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ইমামকে গুলির দৃশ্য দেখেছিলাম। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে র্যাব এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আজ এই আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান তারই প্রতিফলন।
জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যারা বিভ্রান্ত হয়েছিল, পথ হারিয়েছিল, যারা ভুল পথে ভুল আদর্শ বুকে নিয়েছিল, তারা আজ মা-বাবার কাছে ফিরেছে। মা-বাবার মুখে হাসি ফুটিয়েছে, যা অনেকদিন পর দেখছি। এজন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি, এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক। যাঁরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরছেন তাঁদের ট্রাক্টর, কৃষিজ উপকরণ, অর্থ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এর লক্ষ্য—তারা ভালো থাকুক।’
বারবার উৎপাত করলে বারবারই পরাজিত করব
অনুষ্ঠানে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘(কেউ) বারবার উৎপাত করলে, বারবারই পরাজিত করব। ইমপ্রোভাইসড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), ককটেল, বোমা ও জর্দার কৌটার মতো জিনিসপত্র দিয়ে তোমরা কখনো বিজয়ী হতে পারবে না। তোমরা ফিরে এসো। তোমরা ফিরে না এলে প্রাণ যাবে। এই অন্ধকার জগৎ তোমার নিজেকে, পরিবারকে ও রাষ্ট্রকে বিপদে ফেলতে পারে।’
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ বারবার জঙ্গিবাদে আক্রান্ত হয়েছে। তবে এর কোনোটাই বাংলাদেশ থেকে সৃষ্টি হয়নি। প্রতিবারই বাইরের দেশ থেকে এসেছে, প্রতিবারই শান্তিপ্রিয় মানুষের সহায়তায় তাদের পরাস্ত করেছি। এখনো যারা এ ধরনের কাজে জড়িত আছে, তাদের প্রতি আমাদের নজরদারি অব্যাহত আছে। র্যাব, অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট, কাউন্টার টেরোরিজমসহ একাধিক টিম তাদের নজরদারিতে রেখেছে। আমাদের গোয়েন্দা কমিউনিটিও এ বিষয়ে তৎপর রয়েছে। হয়তো পরিপূর্ণ ভাবে সব ঘটনা শুরুতে বিনষ্ট করতে পারিনি। শতভাগ না হলেও অন্তত ৯০ ভাগেরও বেশি ঘটনা শুরুতেই বিনষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি।’
পুলিশপ্রধান বলেন, ‘তোমরা আলোর পথের অভিযাত্রী, এটা দুঃসাহসিক কাজ। এজন্য তোমাদের অভিনন্দন। জঙ্গিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার এই ধারা বাংলাদেশই প্রথম চালু করেছে।’
ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘হলি আর্টিজানের পর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের নানা বিধি-নিষেধ দিয়েছে। অনেকে বলেছে, বাংলাদেশ আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। পৃথিবীর কোনো দেশ থেকে আমরা সহায়তা পাইনি। কিন্তু দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা জঙ্গিবাদকে পরাজিত করেছি।’
ফিরে আসা জঙ্গিদের আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণের অনুরোধ
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, “যারা আজ সমাজের মূলধারায় ফেরার জন্য আত্মসমর্পণ করেছে, তাদের এই সমাজ যেন আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করে নেয়। ‘তুই জঙ্গি’ এ কথা বলে যেন তাকে আবারও নেতিবাচক পথের দিকে ঠেলে দেওয়া না হয়।”
র্যাব মহাপরিচালক বলেন, ‘জঙ্গিবাদ একটা আদর্শিক সমস্যা। এটা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজন সঠিক ধর্মীয় ব্যাখ্যা। তাদের সমাজের মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনতে চাই। আজ আত্মসমর্পণ করা নয়জনের মধ্যে আটজনই তাদের পরিবারের কাছে ফেরত যাবে। একজনকে আইনের কাছে সোপর্দ করা হবে। আইনি কার্যক্রমের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে পরিবারের কাছে ফেরত যাবেন তিনি।’
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা অভিযানমূলক কার্যক্রম আরো বেগবান করব, কোথাও জঙ্গিরা টিকে থাকতে পারবে না। তাই যাঁরা পলাতক আছেন, আইনের কাছে আত্মসমর্পণ করুন। বাংলাদেশকে একটি শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করুন।’