ঝিনাইদহে জিটিভির সাংবাদিক লাঞ্ছিত
ঝিনাইদহে সংবাদ সংগ্রহের সময় গাজী টিভির (জিটিভি) ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ওলিয়ার রহমানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাঁর মোবাইল ফোন। আজ সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিপুর গ্রামে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন।
ন্যক্কার জনক এ ঘটনার প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন জেলার সাংবাদিক সমাজ। জেলা প্রেসক্লাবের জরুরি সভায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে।
ভুক্তভোগী জিটিভির জেলা প্রতিনিধি ওলিয়ার রহমান জানান, আজ দুপুরে কালীগঞ্জ উপজেলার ১ নং সুন্দরপুর-দুর্গাপুর ইউনিয়নের কাদিপুর গ্রামে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর অভিযান চালাচ্ছে—এমন খবরের ভিত্তিতে সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান তিনি। সাদাপোশাকে অভিযানের অংশ নেওয়া মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে তিনি পরিচয় দেন। তাঁর পরিচয় পাওয়ার পরই ক্ষেপে যান তাঁরা। তাঁরা তাঁর মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে বাইরে বের করে দেন। সেইসঙ্গে তাঁকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করেন তাঁরা। কথাবার্তার একপর্যায়ে হুংকার দিয়ে তাঁরা তাঁকে বলেন, ‘অনেক সাংবাদিককে জেল খাটিয়েছি আমরা।’
অভিযানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহ কার্যালয়ের পরিদর্শক বিশ্বাস মফিদুল ইসলাম, বহুল আলোচিত উপপরিদর্শক আলতাফ হোসেন, সহকারী উপপরিদর্শক পাপিয়া সুলতানা, সিপাই শ্যামল, কামরুলসহ কয়েকজন অংশ নেন বলে জানা গেছে।
অথচ এ অভিযানের সময় কোনো মাদক উদ্ধার করা হয়নি। বরং একজনকে আটক করে অজ্ঞাত কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় আজ সন্ধ্যায় সাড়ে ৭টার দিকে ঝিনাইদহ জেলা প্রেসক্লাবে এক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ক্লাব সভাপতি মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক শেখ সেলিম, সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম, আব্দুল হাই মাহফুজুর রহমানসহ অনেকে।
সভায় আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি আদায় না হলে বিক্ষোভ সমাবেশ, প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি প্রদান এবং অবস্থান কর্মসূচি পালনের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সভায় এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছেন কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি জামির হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সাবজাল হোসেনসহ কর্মরত সাংবাদিকরা।
এ বিষয়ে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া পরিদর্শক বিশ্বাস মফিদুল ইসলাম বলেন, ‘না বুঝে আমার এক সিপাই তাঁর মোবাইল ফোনটা নিয়ে নিয়েছিল। পরে আমরা তার কাছে ভুল স্বীকার করেছি।’
সহকারী পরিচালক গোলক মজুমদার বলেন, ‘আমি ঢাকাতে অবস্থান করছি।’
পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরও কেন সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করা হলো—এমন প্রশ্ন ছিল এই কর্মকর্তার কাছে। উত্তরে তিনি বলেন, ‘ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। পরে তা ঠিক হয়ে গেছে।’
সাংবাদিক সমাজের দাবি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের জেলা কর্মকর্তাদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড থামছেনা। বিষাক্ত মদ পান করে মরছে মানুষ। ভারতীয় ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকে ছেয়ে গেছে গোটা অঞ্চল। অথচ মাদক উদ্ধারের নামে চলছে নাটক। এর আগে ঝিনাইদহ শহরে এমন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। পৌর কাউন্সিলর প্রার্থী মাসুদকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন উপপরিদর্শক আলতাফ হোসেনসহ অন্যরা। আগুন নামের এক ইজিবাইক চালককে দুই পিচ ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে তাঁর (আগুনের) স্ত্রীর কাছ থেকে টাকা আদায় করে ভুরিভোজ করে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।
সাংবাদিক সমাজের দাবি, এসব চিহ্নিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।