ঠাকুরগাঁওয়ে জামিনে মুক্তি পেলেন সাংবাদিক তানু
ঠাকুরগাঁওয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হওয়া সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। আজ রোববার বিকেলে আদালতের হাজতখানা থেকে মুক্তি পান তিনি।
এর আগে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালত তানুর জামিন মঞ্জুর করেন এবং পুলিশের করা পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন নাকচ করে দেন।
গত ৫, ৬ ও ৭ জুলাই জাগোনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম, বাংলাদেশ প্রতিদিন এবং দৈনিক যুগান্তরে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনা রোগীদের খাবারে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে জানানো হয়, করোনার সময়ে করোনা রোগীদের দৈনিক ৩০০ টাকা করে খাবার বরাদ্দ থাকলেও কর্তৃপক্ষ ৭০-৮০ টাকায় নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করছেন যা ভর্তিকৃত রোগীরা অভিযোগ করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ৯ জুলাই সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. নাদিরুল আজিজ চপল বাদী হয়ে তানুসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। তানু জাগোনিউজ, ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশন ও দৈনিক ইত্তেফাকের জেলা প্রতিনিধি। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের জেলা প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটু ও নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকমের জেলা প্রতিনিধি রহিম শুভ।
তবে মামলার এজাহারেই হাসপাতালে খাদ্য সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটার কথাটি স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, লকডাউনের কারণে খাদ্য সরবরাহে দুই-এক দিন ‘সামান্য ব্যত্যয়’ হয়েছে।
আবার সংবাদটিকে মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, জনরোষ সৃষ্টিকারী ও মানহানিকর উল্লেখ করে এজাহারে এ-ও দাবি করা হয় যে, এই সংবাদ প্রকাশের উদ্দেশ্য অসৎ। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট ও সুনাম ক্ষুণ্ণ করা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার মতো অভিযোগও আনা হয় মামলায়।
দায়ের হওয়া মামলার বিষয়ে খবর নিতে গেলে ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশ গতকাল শনিবার রাত ৮টায় সাংবাদিক তানুকে গ্রেপ্তার করে। রাতে তানু থানা হাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালের বিছানায় হাতকড়া লাগানো অবস্থায় তাঁকে শুয়ে থাকতে দেখা যায়। তানুকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। রাতেই প্রেস ক্লাবের পক্ষ থেকে ক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিক তানুকে ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ডালিম কুমার রায় সাংবাদিক তানভীর হাসান তানুর পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। অন্যদিকে তাঁর আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা ও অসুস্থতার কারণে পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় তানুর জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলা পরিচালনা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হালিম, জাহাঙ্গীর আলম, এমরান হোসেন চৌধুরী, ফজলে রাব্বি বকুল ও লিয়ন।
জামিন পাওয়ার পর তানুর আইনজীবী আরিফুল ইসলাম তাঁর জামিননামা আদালতে দাখিল করেন। এরপরই আদালতের হাজতখানা থেকে সাংবাদিক তানু মুক্ত হন। পরে তাঁকে জেলা প্রেসক্লাবে নিয়ে যান সাংবাদিকেরা। সেখানে ফুলের মালা পরিয়ে তাঁকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। সাংবাদিকেরা অবিলম্বে তানুসহ তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে করা মামলা দ্রুত প্রত্যাহারের দাবি জানান।